মিলন: মা-মেয়ে। নিজস্ব চিত্র
মায়ের চোখ সরছে না মেয়ের মুখ থেকে। তরুণী মেয়ের সেই কবে বিয়ে দিয়েছিলেন। আজ সেই মেয়ের মুখেই যেন হাল্কা বলিরেখা। মেয়েও অঝোরে কেঁদে চলেছেন মায়ের দিকে তাকিয়ে। মাথা জুড়ে পাকা চুল। কী করে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল কুড়িটা বছর! ফিরে যখন এল, তখন স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে দু’জনেই বিহ্বল, আত্মহারা। মা-মেয়ের আনন্দ-কান্নার আবেগ ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে কাঁটাতার ঘিরে মিলন মেলার কয়েকশো মানুষের মধ্যে। অনেকেই দেখলেন এই দৃশ্য।
বালুরঘাট ব্লকের ভাটপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্তে এই সময় প্রতি বছরই বসে মিলন মেলা। সীমান্তের গ্রামে আয়োজন হয় সীমান্তে এই সময় প্রতি বছরই বসে মিলন মেলা। সীমান্তের গ্রামে আয়োজন হয় পুজোর। মঙ্গলবার এই মিলন মেলাতেই মা তরু বর্মণের সঙ্গে মিলিয়ে দিল বাংলাদেশে বিয়ে হওয়া মেয়ে বাসন্তীকে। কাঁটাতারের বাধা পেরিয়ে মা-মেয়ের মতোই পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশে গেলেন দু’পারের কয়েকশো মানুষ।
১৯৯৯ সাল নাগাদ বাংলাদেশে মেয়ে বাসন্তীর বিয়ে দিয়ে এপারে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর এলাকায় ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন তরুদেবী। বছর পঁয়ষট্টির তরুদেবীর কথায়, ‘‘আর্থিক সমস্যা ও নিয়মের বেড়াজালে পাসপোর্ট ভিসা করে আর ওপারে গিয়ে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এই মেলায় মেয়ে আসবে, খবর পেয়েই ছুটে এসেছি।’’ বাংলাদেশের দিনাজপুরের সাকাহারি গ্রাম থেকে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে সকাল থেকেই সীমান্তে অপেক্ষায় ছিলেন বাসন্তী। বৃদ্ধা তরুদেবী বলেন, ‘‘প্রায় ২০ বছর পর মেয়ের সঙ্গে দেখা হল। জীবদ্দশায় মেয়ের সঙ্গে কোনওদিন দেখা হবে ভাবতে পারিনি।’’ চোখ মুছে মেয়ে বললেন, ‘‘মায়ের চুল সাদা হয়ে গিয়েছে। দাঁত পড়েছে। তবে মা তো, চিনেছি ঠিক।’’
পাশেই লাজুক কিশোর নাতিকে বুকে টেনে বৃদ্ধা আদর করে নাড়ুর কৌটো তুলে দেন। বললেন, ‘‘এটাই তো পরম পাওয়া! জীবনে সব কিছু পাওয়া হয়ে গেল আজ!’’