সতর্কতা: ক্যামেরার চোখে ধরা থাকবে এই সীমান্ত। নিজস্ব চিত্র।
কাঁটাতারহীন অবস্থায় থাকা ভারত-নেপালের পানিট্যাঙ্কি সীমান্তের নজরদারি বাড়াতে একাধিক ‘সিসি’ (ক্লোজ়ড সার্কিট) ক্যামেরা বসানো হল৷
গত সপ্তাহে পানিট্যাঙ্কিতে রীতিমতো কন্ট্রোল রুম খুলে ১৩টি ক্যামেরা সীমান্ত এলাকায় বসানো হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি অত্যাধুনিক ক্যামেরা রয়েছে। যা দিয়ে কারও মুখ বা গাড়ির নম্বর আলাদা করে সুস্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। মূলত এ দেশ থেকে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে নেপালে যাওয়ার জন্য মেচি সেতু পর্যন্ত নজরদারি বাড়াতে দার্জিলিং পুলিশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেতুর ট্র্যাফিক ব্যবস্থা, গাড়ির নম্বর চিহ্নিতকরণের কথা বললেও আদতে সন্দেহভাজনদের গতিবিধির নজর রাখতে বা কোনও ঘটনা ঘটলে তার তদন্তের কাজে ‘ফুটেজ’ সংগ্রহ করতেই এই বন্দোবস্ত বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
সমতলের খড়িবাড়ি পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত ছাড়া ফাঁসিদেওয়া, ফুলবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্তও রয়েছে। এর মধ্যে ফুলবাড়ি শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় পড়ে। ফাঁসিদেওয়া সীমান্ত দার্জিলিং জেলা পুলিশের। সেখানে অধিকাংশই কাঁটাতারের বেড়ার সীমান্ত। শুধু ব্লক দফতর লাগোয়া মহানন্দা নদী ঘেঁষে খোলা সীমান্ত রয়েছে। সেখানেও কাঁটাতার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই তুলনায় নেপালে খোলা সীমান্ত অনেক বেশি পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের কাছে ‘স্পর্শকাতর’ বলে পরিচিত।
সম্প্রতি কেএলও জঙ্গি, আইএসআই চর সন্দেহে ধরপাকড় এবং সীমান্তে একাধিক বিদেশি নাগরিকের আটকের ঘটনার পরে, পুলিশ নতুন করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আপাতত বসানো ১৩টি ক্যামেরা নিয়মিত নজরদারির জন্য দু’জন আধিকারিক এবং একাধিক কনস্টেবলকে রাখা হয়েছে। তাঁরা পালা করে ‘কন্ট্রোল রুম ’-এ থাকছেন। সন্দেহভাজন ছাড়াও নেপালে গাড়ি, মোটরবাইক পাচারের ঘটনা আকছার ঘটেছে বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে, শিলিগুড়ি শহর থেকে পর পর একটি বিশেষ ধরনের মোটরবাইক চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তদন্তে দেখা যায়, বেশির ভাগ চোরাই মোটরবাইক নেপালে পাচার করা হয়েছিল।
দার্জিলিং জেলা পুলিশের সুপার সন্তোষ নিম্বলকর বলেছেন, ‘‘এলাকায় সুষ্ঠু নজরদারি এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থার জন্য সিসি ক্যামেরা বসানো চলছে।’’ তিনি জানান, পানিট্যাঙ্কি-সহ মোট ১৪টি ট্র্যাফিক গার্ড রয়েছে। তাতে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিকের মতো পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। প্রতিটি গার্ড গুরুত্বপূর্ণ এলাকার রাস্তার দায়িত্বে রয়েছে। দার্জিলিঙে সদরে ৫০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ধাপে ধাপে কাজ চলছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নেপাল এবং নেপাল সীমান্ত বরাবর রাজ্যের পুলিশ এবং বিভিন্ন এজেন্সির কাছে চিন্তার কারণ। এক সময় আলফা, কেএলও এবং আইএসআইয়ের ঘাঁটি ছিল নেপাল। পরে, তা কমলেও আইএসআই-এর গতিবিধি এখনও রয়েছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি কালিম্পং এবং শিলিগুড়ি থেকে দু’জন আইএসআই লিঙ্কম্যানকে ধরা হয়েছে। তারা নেপালে যাওয়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের। এর পাশাপাশি, মাদক, পণ্য পাচারের ঘটনাও নেপাল সীমান্তে ঘটে বলে প্রায়শই অভিযোগ। খোলা সীমান্ত হয়ে ‘অবাধে’ এ পার ও পার চলে।
সে পরিস্থিতিতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।