বেঙ্গল সাফারি পার্ক। —ফাইল চিত্র।
বেঙ্গল সাফারি পার্কে ব্যাঘ্র শাবকের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন বন দফতর একটি পাঁচ সদস্যের ‘মনিটরিং কমিটি’ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করল। শুক্রবার বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, পার্কে পশু-পাখির নজরদারি এবং পুরো ব্যবস্থাপনা দেখার জন্য কাজ করবে ওই পাঁচ সদস্যের কমিটি। তাতে বেঙ্গল সাফারির অধিকর্তা ছাড়াও, অতিরিক্ত মুখ্য বনপাল, বনপাল, রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সদস্য এবং দুই আধিকারিক থাকবেন। বনমন্ত্রী বলেন, "অপুষ্টি ছিল বাঘের বাচ্চাগুলির। কিন্তু তার বাইরেও কিছু গাফিলতিও ছিল বলে মনে হয়েছে। তাই এই কমিটি গড়া হচ্ছে।" বেঙ্গল সাফারি পার্ক সূত্রের খবর, ২০১৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩, এই পাঁচ বছরে ঘেরাটোপে থাকা ১২টি বাঘের জন্ম হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি শাবক মারা গেল। ২০১৯ সালে পায়ের সংক্রমণে মারা যায় মাদি সাদা বাঘ ইকা। চলতি বছর জুলাইয়ে সাদা বাঘিনি কিকা দুই শাবকের জন্ম দেয়। সাফারি পার্ক সূত্রের খবর, ১৩ জুলাই একটি শাবক মারা যায়। ১৬ জুলাই বেঙ্গল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে সে কথা জানানো হয়। গত চার দিন আগে, নতুন করে বাঘের বাচ্চা মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘গাফিলতিই’ দেখছেন বনমন্ত্রী। বাঘ মারা যাওয়ার পরে, এক রেঞ্জ অফিসারকে তড়িঘড়ি বদলিও করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে কিকার প্রথম শাবক মারা যাওয়ার সময় ‘হগ ডিয়ার’ প্রজাতির একটি হরিণও মারা যায় বলে দাবি। বাইরে থেকে উদ্ধার হয়ে আসা ক্যাঙ্গারু মারা যায়।
উত্তরবঙ্গে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কৃত্রিম প্রজনন প্রকল্পের জন্য বেঙ্গল সাফারিই একমাত্র জায়গা। তাই সেখানে কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করতে চাইছে না বন আধিকারিক এবং খোদ মন্ত্রীও। যদিও কেবল রেঞ্জ অফিসারদের উপরে ‘দায় চাপিয়েই’ দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না বলে মনে করছেন রেঞ্জ অফিসারদের একটি অংশ। তাঁদের দাবি, পার্কের প্রশাসনও এ সব ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। আবার বন দফতরের অফিসারেরা জানান, বাঘের শাবক জন্মানোর পরে মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। বিশেষ করে সাদা বাঘের শাবক বড় করা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। প্রায় তিন মাস শাবকগুলির কাছেও যাওয়া যায় না। মা বাঘিনি তাদের দেখাশুনো করে। সে সময়ে নানা কারণে বিপত্তি বাড়ে।
২০২২ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল সাফারির এ সব সমস্যা ছিল না। বেঙ্গল সাফারিতে সিংহ আসার কথা রয়েছে। এলাকা বাড়ছে বাঘ এবং ভাল্লুকের জন্য। দফতরের কেউ কেউ মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সন্ধিক্ষণে কড়া প্রশাসক ছাড়া, তুলনামূলক ভাবে বড় প্রকল্পগুলি সফলতা পাবে কি না, তা-ও পর পর পশুর মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে। পার্ক সূত্রের দাবি, পার্ক পরিচালনা নিয়েও খুব একটা সন্তুষ্ট নয় বন দফতর। তাই আলাদা করে ‘মনিটারিং কমিটি’ গড়া হচ্ছে যাতে পশু-পাখির মৃত্যু ঠেকানো যায়। একই সঙ্গে, নতুন প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়ন হয়। এ সব নিয়ে অবশ্য বেঙ্গল সাফারির অধিকর্তা কমল সরকার কিছু
বলতে চাননি।