মহিলাদের একা দেখলেই গাড়িতে ওঠার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। — নিজস্ব চিত্র।
দিন হোক বা রাত, তরুণী থেকে মাঝবয়সি— জাতীয় সড়কের উপর মহিলাদের হাঁটতে দেখলেই তাঁদের গাড়িতে চড়িয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন একদল ‘উপকারী’। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তাঁদের হাত ধরে গাড়িতে টেনে তোলার চেষ্টাও হচ্ছে৷ এমনই অভিযোগ উঠছে শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্টেশনপাড়া এলাকায়। এখনও পর্যন্ত ৮ জন মহিলা এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে এ নিয়ে গণ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ পুলিশকর্তারা।
নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্টেশনপাড়ার খুব কাছেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বেশির ভাগ সময়েই জাতীয় সড়ক ধরে যাতায়াত করতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। অভিযোগ, দিন হোক বা রাত, একা মহিলা দেখলেই তাঁদের ‘টার্গেট’ করছে বাইক এবং রাস্তায় টহল দেওয়া একদল অপরচিত যুবক। মহিলাদের গাড়িতে বা বাইকে বসার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিলে হাত ধরে গাড়িতে টেনে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৮ জন মহিলা এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন। তাই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এই মুহূর্তে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে। দু’দিন আগে এমনই অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন ওই এলাকারই এক ছাত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্রীর কথায়, ‘‘জাতীয় সড়কে উঠতেই এক বাইকচালক আমাকে অনুসরণ করতে থাকেন। তিনি হেলমেট পরে ছিলেন। কিছুটা এগিয়ে আসতেই তিনি আমাকে প্রস্তাব দেন, ‘গাড়িতে ওঠো। তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।’ আমি সেই প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তিনি আমাকে জোর করেই বাইকে বসাতে চাইছিলেন। আমি সেখান থেকে পালিয়ে অন্য রাস্তায় চলে যাই। তিনি পিছু নেন। অন্য রাস্তায় দু’টি ছেলেকে আমি ঘটনা বলতেই তাঁরা বাইকওয়ালার দিকে তেড়ে যান। এর পর ওই বাইকচালক পালিয়ে যান। আমি ভয়ে আছি। আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
এই অভিযোগের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন নকশালবাড়ি পঞ্চায়েতের সদস্যা নমিতা মোদক। তাঁর কথায়, ‘‘বছর তিনেক আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৮ জন মহিলার সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’’
একই অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। আশুতোষ বাগচী নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘নকশালবাড়ির কাস্টমস অফিস থেকে খালপাড়া মোড় পর্যন্ত রাস্তায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেই মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এ ভাবে হাত ধরে টানাটানি করে অপহরণের চেষ্টা করলে কোনও অভিভাবক সাহস পাবেন না তাঁদের সন্তানকে রাস্তায় বার হতে দিতে৷ পাশেই রয়েছে নেপাল। অপহরণ করার পর নেপালেও মেয়েদের পাচার করা হতে পারে। এর দায় কে নেবে?’’
এই ঘটনার পর নকশালবাড়ি থানায় দায়ের হয়েছে গণ অভিযোগ। জানানো হয়েছে প্রধান এবং বিডিওকেও। এ নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ। ডিএসপি (গ্রামীণ) অচিন্ত্য গুপ্ত বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশি নজরদারি শুরু হোক ওই রাস্তায়।