ফোনে ছেলের খোঁজ নিচ্ছেন বাঁধন। নিজস্ব চিত্র
মায়ের বরাবরের ইচ্ছে ছেলে বাড়ির খেয়েই চাকরি বা অন্য কোনও কাজকর্ম করুক। ছেলে অবশ্য বাইরে কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন। হোটেল ম্যানেজমেন্টের একটি কোর্স সম্পূর্ণ করার পর সেই স্বপ্নপূরণের সুযোগও এসে যায়। প্রায় দু’মাস আগে জম্মুতে একটি নার্সিংহোমের ক্যান্টিনে খাবারের বন্দোবস্ত করার যাবতীয় দায়িত্ব নেন কোচবিহারের বাণেশ্বরের বাসিন্দা সন্দীপ ভৌমিক। ছেলের ইচ্ছে পূরণে এত দিন সে ভাবে আপত্তি করেননি বাবা। কিন্তু জঙ্গিদের গুলিতে কাশ্মীরে পাঁচ বাঙালি শ্রমিক হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে তাঁরও। কোচবিহারের বাণেশ্বরের বাসিন্দা ভৌমিক দম্পতি এখন প্রায় এক সুরেই বলছেন, ‘‘সামনের মাসেই ওর বাড়ি আসার কথা রয়েছে। এ বার এলে বলব অত দূরে আর যেতে হবে না।’’
বাণেশ্বর বাজারেই জুতোর দোকান রয়েছে সন্দীপের বাবা বাঁধন ভৌমিকের। মা মিঠু ভৌমিক গৃহবধূ। ছেলে সন্দীপ আর নবম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে সঙ্গীতাকে নিয়ে চার জনের সংসার। পরিবারের লোকেরা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে বাণেশ্বর কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন সন্দীপ। তার মধ্যেই একটি সংস্থায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কোর্সও করে ফেলেছেন। সেই সুবাদে কয়েক জনের সঙ্গে পরিচয় হয়। জন্মুতে কাজে যোগ দেন সন্দীপ। তার আগে কিছু দিন বারাণসীর একটি হোটেলেও চাকরি করেছেন।
বাঁধন বলছিলেন, “ওর মা সব সময়েই বাড়িতে থেকে ছেলের চাকরি বা কাজের কথা বলেন। কিন্তু একটা ভাল কাজের সুযোগ পেয়ে ছেলে যেতে চাওয়ায় আমি সে ভাবে আপত্তি করিনি। এখন মনে হচ্ছে বাড়িতে থাকাই ভাল।”
মঙ্গলবার রাতেও অন্য এক জনের ফোনের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বাঁধন। তখনও কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে এ রাজ্যের পাঁচ জন বাঙালি শ্রমিক হত্যার কথা জানতেন না। এ দিন সকালে ঘটনার কথা জেনেছেন বাঁধন। তার পরেই আবার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বাণেশ্বর এলাকাতেই সন্দীপদের বাড়ি। মা মিঠু বলেন, “কাল রাতে এলাকায় একটা জলসার অনুষ্ঠান ছিল। টিভি দেখা হয়নি। বুধবার ঘটনার কথা শুনেছি। স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা তো আসেই। এ বার ছেলে এলে তাই ওকে আর অত দূরে যেতে হবে না বলে বলব। এখানেই কোনও কাজ করুক।”
সব মিলিয়ে পরিবারের লোকেরা তো বটেই, তাঁদের পরিচিতরাও এখন ঘরের ছেলের ভাল ভাবে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। ভৌমিক দম্পতির পরিচিত স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিমা সরকার বলেন, “ওদের বাড়ির সবার সঙ্গে আমার আলাপ আছে। তা ছাড়া এলাকার ছেলে। তাই চিন্তা তো একটু হবেই। ঠিক মতো ছেলেটা বাড়ি ফিরে এলে আমরাও নিশ্চিন্ত হই।”
কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য, এলাকার বাসিন্দা পরিমল বর্মণ বলেন, “পরিবারটি আমারও পরিচিত। ওর বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি ছেলেটা ভাল আছে,তবু ভাল ভাবে বাড়ি ফিরলে আমাদেরও স্বস্তি।” অন্য এক বাসিন্দার কথায়, গোটা গ্রামই যেন পরিবারের মতো। তাই টিভিতে কাশ্মীরের ঘটনা দেখার পর থেকে ঘরের ছেলের চিন্তাও ঘুরছে।