চাষির ঘরে ‘অনুপ্রবেশ’
Malda

কৃষকের কার্ডের আড়ালে ‘রাজত্ব’ ফড়ের

সরকারি সহায়ক মূল্য ১৮৩৫ টাকা প্রতি কুইন্ট্যাল। মহাজন বা ফড়েরা দেয় ১৩৫০-১৪০০ টাকা প্রতি কুইন্ট্যাল। কম দাম দিয়েও বেশি ধান কেনে ফড়েরা। কেন এবং কী ভাবে, খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অভিযোগ, নথিভুক্তকরণ থেকে শুরু করে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষকদের মাধ্যমে ফড়েরাই সক্রিয়। ধান বিক্রির জন্য নথিভুক্তকরণ বা ধান বিক্রির সময় কৃষকরাই যেহেতু সামনে থাকেন, তাই আড়ালে থাকা ফড়েদের নাগাল পাচ্ছে না প্রশাসন।

Advertisement

জয়ন্ত সেন 

মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:০১
Share:

কেনাবেচা: সহায়ক মূল্যে ধান কেনা চলছে মালদহের গাজল কৃষক বাজারে। নিজস্ব চিত্র

‘কৃষক-বন্ধু’ কার্ডের মাধ্যমে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ কাজে লাগিয়ে মালদহের সরকারি ধান ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে ‘ফড়ে-রাজ’ চলছে বলে অভিযোগ উঠল।

Advertisement

অভিযোগ, নথিভুক্তকরণ থেকে শুরু করে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষকদের মাধ্যমে ফড়েরাই সক্রিয়। ধান বিক্রির জন্য নথিভুক্তকরণ বা ধান বিক্রির সময় কৃষকরাই যেহেতু সামনে থাকেন, তাই আড়ালে থাকা ফড়েদের নাগাল পাচ্ছে না প্রশাসন।

তবে প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক আড়ালে মানছেন, ‘কৃষক বন্ধু’ কার্ড ঢাল করে কৌশলে ফড়েরা ছোট ও ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে বাজার থেকে কম দামে কেনা ধান বিক্রি করছে সরকারি ধান ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে। ধানকল মালিকদের একাংশের অভিযোগও তাই।

Advertisement

মালদহ জেলায় এ বছর সরকারি ভাবে ২ লক্ষ কুড়ি হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। খাদ্য দফতরের ক্রপ পার্চেজ সেন্টার (সিপিসি), বেনফেড, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের মাধ্যমে ওই ধান কেনা হবে। সেই কাজ শুরুও হয়েছে। তবে মালদহের খাদ্য দফতর পরিচালিত ধান ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে কৌশলে কৃষকদের কাজে লাগিয়ে ‘ফড়ে-রাজ’ চলছে বলে অভিযোগ।

কী ভাবে?

জেলার গাজল, বামনগোলা, পুরাতন মালদহ ধান ক্রয়কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ধান বিক্রির ক্ষেত্রে ‘কৃষক-বন্ধু’ কার্ডকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোনও কৃষকের কাছে সেই কার্ড থাকলে সরাসরি তাঁর নাম নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই কৃষকের কত পরিমাণ জমি রয়েছে, তা ধান কেনার ক্ষেত্রে দেখা হচ্ছে না। অভিযোগ, সে জন্য ফড়েরা কৃষক-বন্ধু কার্ড থাকা ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষকদের একাংশকে নিশান করছে।
ধান ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ফড়েরা ওই কার্ড থাকা কৃষকদের মাধ্যমে দু’টি পদ্ধতিতে ধান বিক্রির সুযোগ নিচ্ছে। প্রথমত, মোটা অঙ্কের টাকা কৃষকদের হাতে তুলে দিয়ে ধান চাষের জন্য জমি লিজ নেওয়া হচ্ছে। ধান উঠলে সেই কৃষকের কার্ড কাজে লাগিয়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে নাম নথিভুক্তকরণ থেকে শুরু করে ধান বিক্রি করিয়ে নিচ্ছে ফড়েরা। নথিভুক্তকরণ ও ধান বিক্রির দিনগুলিতে কৃষকের যাতায়াত ও অন্য খরচও দিচ্ছে তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়কেন্দ্রে ৪০ কুইন্ট্যাল করে ধান কিনছে সরকার। যে সমস্ত কৃষকের জমি কম, তাঁদের জমিতে অত ধান উৎপন্ন হয় না। অভিযোগ, বাকি ধান বাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কুইন্ট্যাল দরে কিনে ফড়েরা সংশ্লিষ্ট কৃষকের মাধ্যমে সহায়ক মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছে। কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ নিয়ে ‘চুক্তি’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

ধান বিক্রির এই কৌশলের কথা স্বীকার করেছেন ধানকল মালিকদের একাংশও। এ বিষয়ে খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা মন্তব্য করতে চাননি। অতিরিক্ত জেলাশাসক অশোক মোদক বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement