—প্রতীকী চিত্র।
কারও মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছে, কাউকে বলা হয়েছে, "চুপচাপ বসে থাকুন। না হলে বাড়ি ফিরতে পারবেন না।" তার পরে চলেছে ছাপ্পা। কোচবিহার জেলার বুথে বুথে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক ভোটকর্মীর। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পরে ১২ ঘণ্টা কেটে গেলেও সেই আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ওঁদের।
শনিবার গভীর রাতে ভোটকেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন পল্লব সরকার। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন— ‘‘আমরা কি জেগে আছি নাকি মারা গিয়েছি। এ অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। গত কালের ভোটে এক জন ভোটকর্মী হিসেবে যে নারকীয় অভিজ্ঞতা হল তা অবর্ণনীয়।’’ পল্লব জানিয়েছেন, মাথাভাঙা ১ ব্লকের বৈরাগীরহাটে ১১৯ নম্বর পোলিং স্টেশনে তাঁদের ডিউটি পড়েছিল। সঙ্গে ছিলেন বয়সে প্রবীণ এক জন হোমগার্ড। বুথকেন্দ্রে পৌঁছেই জানতে পারেন, এলাকা খুব একটা সুবিধার নয়। রাতে কিছু লোকজন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেও যান। অভয় দিয়ে যান, "কোনও ভয় নেই। এখানে গন্ডগোল হবে না।" শনিবার সকালে ভোট শুরু হওয়ার পরেই দেখা যায় অন্য ছবি। বেশ কিছু সশস্ত্র লোকজন ঢুকে পড়েন বুথে। তার পরেই শুরু হয় মারপিট। ওই অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভোটকর্মীরা। বার বার নানা জায়গায় ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি। ওই অবস্থার মধ্যেই বসে থাকতে হয় অনেক ঘন্টা।
পল্লব বলেন, ‘‘মাঝে মনে হয়েছিল আজ বোধহয় বেঁচে ফিরতে পারব না। অবশেষে ফিরেছি। কিন্তু ওই ঘটনাগুলো চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’
আরও কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছিল দিনহাটার দীপঙ্কর বর্মণকে। তাঁর ডিউটি পড়েছিল দিনহাটারই নিউ গীতালদহের ১৮৮ নম্বর বুথে। তিনি জানান, নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা বুথে পৌঁছন। রাতে কেউই ঘুমোতে পারেননি। কারণ, বুথকেন্দ্রের আশপাশ মাঝেমধ্যেই বোমার শব্দে কেঁপে উঠেছে। ভোটের দিন সকালে সব প্রস্তুতি নিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করেন তাঁরা। সকাল সকাল ভোটারদের লাইনও পড়ে যায়। ভোট শুরু হওয়ার এক ঘন্টা পরেই ভোটার লাইনে বচসা শুরু হয়। পুলিশকর্মী লাইন ঠিক করতে গেলে তাঁকে কেউ কোনও গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। এর পরেই আচমকা পনেরো-কুড়ি জন লোক বুথের ভিতরে ঢুকে পড়ে। শুরু হয় তুমুল মারপিট। ভাঙচুর শুরু হয় ভোটকেন্দ্রে। ব্যালট বাক্সে জল ঢেলে দেওয়া হয়। সামনের দুটো দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আতঙ্কে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে অন্য একটি ঘরে ঢুকে পড়েন ভোটকর্মীরা। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘বাইরে তখন গুলি-বোমা চলছে। প্রায় কুড়ি মিনিট। এর পরে আমাদের ঘরের দরজাও ভেঙে দেওয়া হয়। অস্ত্র দেখিয়ে আমাদের কাছে ভোটের সরঞ্জাম কেড়ে নেওয়া হয়।’’ তিনি আরও জানান, এর পরে তাঁরা একটি গাড়িতে বসে থাকেন। অনেক পরে পুলিশ পৌঁছয়। তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। শেষপর্যন্ত একটি সাদা কাগজে মুচলেকা দিয়ে ফের ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে ফিরে যান তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরেও ঘুমোতে পারছি না।’’ আরেক ভোট কর্মী সুব্রত সাহা বলেন, ‘‘আমাকে মাথায় বন্দুক ধরে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’’