একজোট: বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ছবি। মঙ্গলবার ৩১তম জেলা বইমেলার উদ্বোধনের পদযাত্রায়, মালদহের ইংরেজবাজারে। ছবি: জয়ন্ত সেন
কারও হাতে কোরান, কারও হাতে বাইবেল, গীতা বা গ্রন্থসাহেবের ছবি— শহরের রাজপথে এ ভাবেই পাশাপাশি হেঁটে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে শুরু হল মালদহের ৩১-তম জেলা বইমেলা।
মঙ্গলবার দুপুরে ইংরেজবাজার শহর পরিক্রমা করে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। কোরান, বাইবেল, গীতার ছবির পাশাপাশি ভারতের মানচিত্র হাতে তাতে শামিল হয় পড়ুয়ারা। বইমেলার উদ্বোধনের মঞ্চেও বক্তাদের কথায় ছিল সম্প্রীতির সুর।
এনআরসি, নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই চলছে। কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ— রাস্তায় নেমে তার বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। আন্দোলনের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তাও দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রীতির বার্তা দিতে বইমেলার উদ্বোধনই বেছে নিলেন জেলাবাসী। তা নিয়ে সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবতী বলেন, ‘‘বইমেলার উদ্বোধনের শোভাযাত্রায় যে বার্তা দেওয়া হয়েছে তা এখন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাতে জেলাবাসীর আন্তরিকতাও প্রকাশ পেয়েছে। দেখে খুবই ভাল লাগছে।’’
‘ভালোবাসার মেলবন্ধনে গড়ে উঠুক নতুন বিশ্ব’— এমনই থিম এ বারের জেলা বইমেলার। উদ্যোক্তারা জানান, শহরবাসীর নজর টানতে প্রতি বারই বইমেলার আগে শোভাযাত্রা বের হয় শহরে। ইংরেজবাজারের বৃন্দাবনী ময়দানে জমায়েত হয় শহরের সমস্ত স্কুলের পড়ুয়ারা। ছিলেন সাধারণ মানুষও। শোভাযাত্রার প্রথম সারিতে হাতে হাতে ছিল গীতা, বাইবেল, কোরান, গ্রন্থসাহেব, ত্রিপিটক লেখা প্লাকার্ড। তার পরেই নজর কাড়ে এক দল কিশোর-কিশোরীর হাতে ভারতের মানচিত্র।
বইমেলায় সম্প্রীতির বার্তা দেখে খুশি বইপ্রেমীরা। তাঁদের দাবি, এনআরসি, নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। সম্প্রীতি রক্ষারও বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা। মালদহের বইমেলায় শোভাযাত্রা থেকেও এ বার সেই বার্তা দেওয়া হল।
বইমেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে। সমস্ত ধর্মের মানুষ যে ভাবে শান্তিতে দেশে বসবাস করছেন, সে ভাবেই যাতে আগামী দিনেও থাকতে পারেন, সেই বার্তা দিতেই এমন উদ্যোগ।’’
এ দিনের বইমেলায় জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, মালদহের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল, মৌসম নূরও শামিল হন। আয়োজকেরা জানান, ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বই মেলা।
এ দিনের শোভাযাত্রা নিয়ে বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানকেও রাজনীতির মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছে শাসক দল।’’ পাল্টা মৌসম বলেন, ‘‘রাজনীতির কোনও বিষয় নেই। মানুষ স্বেচ্ছায় রাজনীতির উর্ধ্বে রাস্তায় নামছেন।’’