শহরের গায়েই ফেলা হচ্ছে মেডিক্যাল বর্জ্য

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেকেই জানিয়েছেন, যাঁরা ওই কাজ করছে তাঁদের শরীরের রক্তবাহিত রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৯
Share:

বিধি ভেঙে শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে ইস্টার্ন বাইপাসে সাহু নদীর ধারে নানা নার্সিংহোম-হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে নদী ও লাগোয়া বনাঞ্চল দূষিত হচ্ছে। তেমনই ওই বর্জ্য থেকে নানা রোগ শিলিগুড়ি শহরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না পরিবেশপ্রেমী ও চিকিৎসকেরা। শুধু তাই নয়, খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকা ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, গ্লাভস, পলিপ্যাক তুলে ছোট ট্রাকে বোঝাই করার ছবিও দেখা যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পুরসভা-পরিবেশ দফতর ও প্রশাসনের এ‌কাংশের উদাসীনতার জন্যই শিলিগুড়িবাসীর বিপদ বাড়ছে। তবে বিষয়টি শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করে দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেকেই জানিয়েছেন, যাঁরা ওই কাজ করছে তাঁদের শরীরের রক্তবাহিত রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এমনকী, ওই গ্লাভস, সিরিঞ্জ দুয়ে ফের অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নার্সিংহোম, হাসপাতালে পৌঁছলে কী হতে পারে সেটা ভেবে শিউরে উঠছেন চিকিৎসকদের অনেকেই। কেন পুরসভা, পরিবেশ দফতর অভিযানে নেমে বাইপাসে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে পারছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেনই বা যে সংস্থা নদীর ধারে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলে দূষণ ও রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে না তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি শহরের ৩০টি নার্সিংহোম ও হাসপাতালে বর্জ্য নিয়ে য়াওয়ার জন্য সরকারি ভাবে একটি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। সেই সংস্থাই ওই বর্জ্য নিয়ে নষ্ট করে ও পুড়িয়ে দেয়। পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য় জানান, ফুলবাড়িতে চিকিৎসা বর্জ্য পোড়ানো ও নষ্ট করার পরিকাঠামো রয়েছে সংস্থাটির। মেয়র বলেন, ‘‘তার পরেও কে বা কারা বাইপাসে সাহু নদীর ধারে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলছে তা দেখতে হবে। পুরসভার পক্ষ থেকে বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

Advertisement

শিলিগুড়ি পুরসভার সাফাই বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয় ঘটক জানান, পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি না থাকার সুযোগেই এমন ঘটতে পারে। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার পরিষদীয় দলের তরফে সরেজমিনে তদন্তে যাব।’’

কিন্তু, প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজনের অভিযোগ, পুরসভার বোর্ড টাঙানো গাড়িতেই ভোরে ওই চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। শহরের কয়েকটি নার্সিংহোম অসাধু উপায়ে বাড়তি আবর্জনা সাহু নদীর ধারে ফেলছে বলেও সন্দেহ বাসিন্দাদের।

শিলিগুড়ির নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠনের অন্যতম কর্তা ও আইএমএ-এর সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি পীযূষ রায় বলেন, ‘‘চিকিৎসা বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলা বেআইনি। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিশদে খোঁজখবর নিয়ে এমন ঘটনা এড়াতে পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভাকে সাহায্য করব।’’

উত্তরবঙ্গের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শীর্ষ অফিসার গৌতম পালও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তবে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূলের কাউন্সিলর রঞ্জন সরকার দূষেছেন মেয়রকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement