ঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড। শিলিগুড়ির কাছে ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগর এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
মাত্র তিন মিনিটের ঝড় লন্ডভন্ড হয়ে গেল শিলিগুড়ি মহকুমার একাধিক গ্রাম। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা। নকশালবাড়ি, রাজগঞ্জ, খড়িবাড়ি ব্লকের একাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খড়িবাড়ি ব্লকে দু’জন গাছ চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। ঝড়ের দাপটে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে, উড়ে গিয়েছে বাড়ির চাল। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কয়েকটি গ্রামের ভুট্টা এবং আনাজ চাষে। বুধবার সকাল থেকে রাস্তা সাফাই, মেরামতির কাজে নামলেও বাধ সেধেছে বৃষ্টি। আবহাওয়া দফতরের কর্তারা জানান, মঙ্গলবার থেকেই উত্তরপ্রদেশ থেকে নাগাল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত বাতাসের নিম্নভাগে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। এমন আবহাওয়া আরও ৪-৫ দিন চলবে।
মঙ্গলবার ঝড়ের মধ্যে বাড়ি ফেরার সময় খড়িবাড়িতে গাছে চাপা পড়েন এক ব্যক্তি। পরে তাঁকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। খড়িবাড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাতে সেখানেই মারা যান তিনি। মৃতের নাম অখিল রায় (৫২)। তিনি খড়িবাড়ি ব্লকের বাতাসি গ্রাম পঞ্চায়েতের ফর্সাজোতের বাসিন্দা। ওই ব্লকেরই পূর্ব গোধিরা এলাকায় আরও এক বাসিন্দা সুকু মুর্মু (৮০) দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। খড়িবাড়ির হাওদাভিটা এলাকাতেও একটি বাড়ির উপর বড় গাছ ভেঙে পড়লে অল্পের জন্য বেঁচে যান বাসিন্দারা। ৩১ সি জাতীয় সড়কের উপর দুধগেটের কাছে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। মঙ্গলবারের ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নকশালবাড়ি ব্লক। প্রশাসন সূত্রে খবর, মণিরাম এবং নকশালবাড়ি পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রাম পুরো তছনছ হয়েছে। পানিঘাটা রোড, তোতারাম, পাগলা বস্তি এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। সাতভাইয়ায় বিডিও অফিসের মধ্যে হাইটেনশন তার ছিড়ে নিয়ে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। বুধবার সকাল থেকেই গাছ কাটা এবং তার মেরামতির কাজ শুরু করে প্রশাসন। তবে বৃষ্টির জন্য ব্যাহত হয়েছে কাজ। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার এ দিন খড়িবাড়ি ব্লকের কুকরাজোত, খোপলাশি, গোধিরা এলাকাগুলি ঘুরে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক দেড়-দু’কোটি টাকা হবে। চূড়ান্ত হিসেব তৈরির কাজ চলছে।"
জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের সন্ন্যাসীকাটা, ফুলবাড়ি, মাঝিয়ালী এবং বিন্নাগুড়ি পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে ঝড়ের দাপট ছিল। ব্লক প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, রাজগঞ্জ বেশ কয়েক হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। চাল উড়ে গিয়েছে বেশকিছু বাড়ির। অল্পবিস্তর ক্ষতি হয়েছে ফাঁসিদেওয়া ব্লকেও। তবে মাটিগাড়া ব্লক এলাকায় ঝড়ের কোনও প্রভাব পড়েনি বলেই জানিয়েছে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘ত্রাণ বিলিশুরু হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কয়েকদিনে তৈরি হয়ে যাবে।’’
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আগামী চার-পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘বাতাসের নিম্নভাগে নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হলে তার প্রভাব তুলনামূলক একটু বেশি অনুভূত হয়।’’