প্রতীকী ছবি।
ছেলেধরা সন্দেহে একই দিনে দু’বার গণপিটুনির শিকার হয়ে নিজের ছেলেকেই ‘হারালেন’ বিহারের বৈশালীর বাসিন্দা অজয় বাঁসফোর। ঘটনার পর চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও তাঁর সাত বছরের ছেলের খোঁজ মেলেনি। শুধু তাই নয়, অজয়ের সেই ছেলে ঠিক কোথা থেকে নিখোঁজ হয়েছে, তা নিয়েও ধন্দে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ ও রেল পুলিশের কর্তারা। তবে পুলিশকর্তাদের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজের তথ্য খতিয়ে দেখে ওই শিশুর খোঁজ চলছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন থানায় ওই শিশুর বিস্তারিত বিবরণ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার আলিপুরদুয়ার জংশনের ভোলারডাবরির শালবাগান এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে অজয় বাঁসফোরকে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। সেই সময় তাঁর সঙ্গে সাত বছরের ছেলেটিকে দেখে অনেকের মনেই ছেলেধরা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। অথচ, পরে জানা যায়, ছেলেটি অজয়েরই। পুলিশ অজয়কে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে ট্রেনে তুলে দেয়। কিন্তু বীরপাড়া স্টেশনে ফের একবার ছেলেধরা সন্দেহে তাঁকে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। স্টেশনে থাকা আরপিএফ কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে জিআরপি বা রেল পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এখন প্রশ্ন উঠছে, তখন অজয়ের সঙ্গে থাকা সাত বছরের শিশুপুত্রটি গেল কোথায়?
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার বিকালে দলগাঁও স্টেশনে অজয় এক মাদ্রাসা শিক্ষকের ছ’বছরের ছেলেকে অপহরণের চেষ্টা করেছে বলে রটে গিয়েছিল। যার জেরে জনতা তাঁকে ঘিরে ধরে মারতে শুরু করে। ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমার ছেলেকে ওই ব্যক্তি জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলেই চিৎকার করি। তখন বাকিরা তাঁকে ধরে ফেলে। কিন্তু তখন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কোনও ছেলেকে দেখিনি।’’ আরপিএফের এক কর্তাও জানান, জনতার হাত থেকে উদ্ধারের সময়ের অজয়ের সঙ্গে কোন ছেলেকে তাঁরাও দেখেননি।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ছেলেকে নিয়ে বাবাধাম থেকে ফেরার সময় ভাঙ জাতীয় নেশার কিছু খেয়েছিলেন অজয়। সেই নেশার ঘোর তাঁর রয়ে গিয়েছে বলেই পুলিশের দাবি। ফলে ছেলেকে নিয়ে স্পষ্টভাবে তিনি নিজেও কিছু জানাতে পারছেন না। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘ওই শিশু রেল স্টেশন থেকে নিখোঁজ হয়েছে। তাই রেল পুলিশ বিষয়টি দেখছে। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরাও তাকে খোঁজার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন থানায় শিশুটি সম্পর্কে বার্তাও পাঠানো হয়েছে।’’ শিলিগুড়ির সুপারিনটেন্ডেন্ট অব রেল পুলিশ অঞ্জলী সিংহ জানান, এই ব্যক্তির হাবভাব, কথাবার্তা বেশ সন্দেহজনক রয়েছে। পুরো ঘটনার সময়ে তাঁর সঙ্গে শিশু ছিল কিনা, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সহ প্রতিবেদন: অরুণাংশু মৈত্র