মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় জমি মাফিয়ার দৌরাত্ম্য নিয়ে প্রশাসনিক সভা থেকে পুলিশ-প্রশাসনকে দু’দফায় সতর্ক করেছিলেন মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া বার্তা দিয়েছিলেন ভূমি সংস্কার দফতরকেও। ২০১৮ এবং ২০২১ সালের মুখ্যমন্ত্রীর সেই সতর্কবার্তার পরে কিছু দিন অভিযানে নেমেছিল পুলিশ। সোমবার বিকেলে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, কাওয়াখালি, সেবক রোড এলাকার নাম উল্লেখ করে এ বার কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না বলে জানিয়ে তিনি রিপোর্ট নেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময়সীমাও বেঁধে দিলেন। সে সঙ্গে, দলের কেউ জড়িত থাকলে তাঁদেরকেও তিনি ছাড়বেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি, বিশেষ করে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে জমি মাফিয়ারা যা ইচ্ছে তাই করছে। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, পুলিশের একাংশ এদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আর ভূমি সংস্কার দফতরের লোকজনও এদের সঙ্গে আছে। এ সব আর সরকার বরদাস্ত করবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কিছু লোকজন এ সব করবেন। তাতে অনেকেই মদত দেবেন। আর বদনাম হবে সরকারের। এটা আর চলবে না। দেখে নিয়ে আমি দায়িত্ব সব ভেঙে দেব।’’ তার পরেই শিলিগুড়ির মেয়রকে তিনি দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে দেন। বৈঠকের পরে মেয়র বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা-ই করব। এর বাইরে কিছু নেই।’’
সম্প্রতি শিলিগুড়ির সেবক রোডের রামকৃষ্ণ মিশনের জমি দখলের চেষ্টা হয়। তাতে গোটা রাজ্যে শোরগোল পড়ে। অভিযুক্তদের একাংশের সঙ্গে নেতা, পুলিশ অফিসারদের ছবিও (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সামাজিক মাধ্যমে ছড়ায়। পুলিশ প্রথমে অভিযুক্তের মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে মামলাও করে ফেলে। শেষে, চাপের মুখ পড়ে শিলিগুড়ি পুলিশ ময়দানে নেমে ১৩ জনকে ধরে। তবে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ। একটি ‘গ্যাং’ বা দল এই কাজে লিপ্ত, সে খবরও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছয়। এ দিন তিনি বৈঠকে বলেছেন, ‘‘গ্যাংটার সবাইকে ধরতে হবে। যে-ই জড়িত থাকুক, ধরতে হবে। কাউকে ছাড়া যাবে না।’’
শহরের প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, ‘‘জমি মাফিয়ারাই তৃণমূলের দলের সম্পদ। এদের সঙ্গে মিলে নেতারা এলাকাভিত্তিক ইজারা নিচ্ছেন। শুধু তাঁদের সবাইকে নেত্রীর আনুগত্যে থেকে ভোটে জেতাতে হবে। শহর এলাকায় তা হচ্ছে না দেখেই নেত্রী রেগে গিয়েছেন।’’ শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে তো আগে ঘরের লোককে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। উনি তো সব কিছুর পান্ডা। শহর এলাকায় ভোটে হের,ে এখন এর-ওর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।’’