সুনতালেখোলা থেকে মৌচুকির পথে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।
গত সোমবার সন্ধ্যা থেকেই সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে। ভোর থেকে আকাশ পরিষ্কার। তারপরে আর ঘরে থাকবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাহাড়ি পথে হাঁটলেন ১৮ কিলোমিটার। ক্লান্তিহীন হাঁটায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের হাঁফ ধরলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দীপনায় দিনভর কোনও ভাঁটা পড়েনি। গরুবাথান ব্লকের সামসিং লাগোয়া সুনতালেখোলাতে মঙ্গলবার কার্যত দিনভর এ ভাবেই হেঁটে ঘুরলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সকাল ১০টার পরই পথে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এরপরই কখনও সামসিং ফাঁড়ি বস্তি পৌঁছে গেলেন। আবার কখনও টানা ৮ কিলোমিটার অত্যন্ত খাড়া পথ হেঁটে নেওড়া ভ্যালির গভীর জঙ্গল দিয়ে পাকদণ্ডি ভেঙে পৌঁছে গেলেন মৌচুকি বনবাংলোতে। কখনও আবার পাহাড়ি বাজারে মোমোর দোকানে বসে মোমোও খেয়ে নিলেন তিনি।
সুনতালেখোলার বন উন্নয়ন নিগমের কটেজ থেকে বেরিয়ে ঝুলন্ত দোলনা সেতু পেরিয়ে পাহাড়ি পথে টানা পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে চলে আসেন সামসিং ফাঁড়ি বস্তিতে। সেখানে যাবার পথেই সুনতালেখোলা বাজারে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান শেরপা ডেভেলপমেন্ট কালচার বোর্ড। সংগঠনের পক্ষে সভাপতি নিমা শেরপা, মিঙমা শেরপারা জানান, কালিম্পং মহকুমা থেকে তারা শুধুমাত্র স্বাগত জানাতেই এসেছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘গত ২৩ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী আমাদের জন্যে পৃথক বোর্ড বানিয়েছেন। সে কারণেই স্বাগত জানাতে চলে এসেছি।’’ এদিকে ফের সামসিং ফাঁড়ি বস্তি থেকে বনউন্নয়ন নিগমের কটেজে ফেরার সময় তামাঙ্গ ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা তাঁদের ডুয়ার্স এলাকার উন্নয়নের জন্যে অর্থ বরাদ্দের দাবি করে স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের সহ সভাপতি প্রণয় তামাঙ্গ জানান, পাহাড় এলাকায় উন্নয়নের জন্যে তামাঙ্গ জনগোষ্ঠী বরাদ্দ পেলেও সেই বরাদ্দ যাতে ডুয়ার্স এলাকাতেও আসে সেই দাবিই তাঁরা রেখেছেন। পাশাপাশি সামসিং এলাকার একটি বৌদ্ধ গুম্ফার উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দ দাবি করা হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
১০ কিমি হেঁটে বেলা সাড়ে এগারোটায় বন উন্নয়ন নিগমের কটেজে পৌঁছানোর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান কালিম্পঙের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী। তিনি হাতে করে নিয়ে আসেন অর্কিডের ফুলের তোড়া। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিধানসভা এলাকাতে এসেছেন সে জন্যেই সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছি বলে জানান তিনি পাশাপাশি পৃথক কালিম্পঙ জেলার দাবিও এদিন জানান। পর্যটন উন্নয়ন অর্কিড রপ্তানির বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানান। এদিন হরকাবাহাদুর বলেন, দার্জিলিঙ জেলার মধ্যে কালিম্পং মহকুমা বিরাট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। শুধু জনসংখ্যা বিচার করলেই হবে না, আয়তন দেখেও জেলার বিষয়টি যাতে খতিয়ে দেখা হয় তা-ও বলেছি মুখ্যমন্ত্রী। হরকাবাহাদুরের সঙ্গে আধ ঘণ্টা কথা বলেই ফের সাড়ে বারোটায় মুখমন্ত্রী হরকাবাহাদুরকে নিয়ে প্রত্যন্ত মৌচুকি বনবাংলোতে হেঁটে পৌছে যান। ফেরার সময় অবশ্য গাড়িতে করেই ফিরে আসেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রেই জানা গিয়েছে, সামসিং সুনতালেখোলার সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়ন করবে রাজ্য সরকার। রাজ্য যুব দফতর, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন সব দফতরকেই একযোগে কাজে লাগিয়ে সামসিং, সুনতালেখোলার সামগ্রিক উন্নয়ন যাতে করা যায়, সেই বিষয়েও এদিন বন উন্নয়ন নিগমের কটেজে বসেই ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনা করেন তিনি। সুনতালেখোলার সামগ্রিক প্রকৃতিতে অত্যন্ত মুগ্ধ মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, পাহাড়ি পথে ট্রেক করার আনন্দ যেমন এখানে রয়েছে, পাশাপাশি নেওড়া ভ্যালির মত জঙ্গল থাকাটয় গা ছমছমে ভাবটাও অনুভব করা যায় এখানে।