বিক্ষোভ: সামসিতে পথ অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
আধার কার্ড সংশোধন সহ নতুন কার্ড করার জন্য ডাকঘরে হাজির কয়েক হাজার বাসিন্দা। অথচ প্রতিদিন তা করা হবে মাত্র ২৫ জনের করে। তার জেরে আগে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য হুড়োহুড়ি। ধাক্কাধাক্কিতে শিশু কোলে মহিলা সহ অনেকেই ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়লেন। অল্পবিস্তর আহত হলেন আধার কার্ডের জন্য ডাকঘরে আসা বাসিন্দাদের অনেকেই। চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ায় পুলিশ ডাকলেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাকাল হতে হল পুলিশকেও। ঘটনার জেরে ডাকঘরের সামনেই জাতীয় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলেন বাসিন্দারা।
মালদহের সামসি ডাকঘরের সামনে সোমবার সকালে ওই ঘটনাকে ঘিরে তেতে ওঠে গোটা এলাকা। প্রতিটি ডাকঘরে আধার কার্ডের কাজ চালু করার দাবিতে দু’ঘন্টা ধরে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকায় চাঁচলের সঙ্গে মালদহের যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ঘণ্টা দু’য়েক বাদে পুলিশের আশ্বাসে দুপুর একটায় অবরোধ উঠলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পরিকাঠামোর না থাকায় এক দিনে ২৫টির বেশি কার্ড সংশোধন করা সম্ভব নয় বলে ডাকঘর কর্তৃপক্ষের দাবি। দীর্ঘ দিন বাদে শুক্রবার থেকে চাঁচল মহকুমায় একমাত্র সামসি ডাকঘরে ফের আধার কার্ডের কাজ শুরু হয়েছে। একই রকম সমস্যায় বিশৃঙ্খলার জেরে সেদিনও ডাকঘরে ভাঙচুর চলেছিল।
এনআরসি আতঙ্কেই এই হুড়োহুড়ি বলে সূত্রের খবর। পরিস্থিতি এমন হতে পারে বলে আগাম ধারণা থাকা সত্ত্বেও কেন বাড়তি পরিকাঠামো নিয়ে কাজে নামা হল না, সেই প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু।
চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক সঙ্গে প্রচুর মানুষ ডাকঘরে হাজির হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যাই হোক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এ ভাবে লাইন না দিয়ে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করার কথা ডাকঘর কর্তৃপক্ষকে ভাবতে বলা হয়েছে।’’
বছর খানেক আগে বেশ কিছু অনুমোদিত এজেন্ট আধার কার্ড তৈরির কাজ করতেন। কিন্তু তা আপাতত বন্ধ। তারপর থেকে তা জেলা সদর মালদহ ডাকঘর ও নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাঙ্কেই করা হচ্ছিল। কিন্তু এনআরসি নিয়ে হইচই শুরু হতেই আধার কার্ড সংশোধন সহ যাদের তা নেই তা নতুন করে করার হিড়িক পড়ে যায়। বাসিন্দাদের উদ্বেগ আঁচ করে গত শুক্রবারই প্রথম সামসি ডাকঘরে তা শুরু হয়। তারপর এদিন জানাজানি হতেই ডাকঘরে হাজির হন অন্তত চার হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। ফলে কে আগে সুযোগ পাবেন, তা নিয়েই তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা।
সামসি ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার আনন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখানে দৈনিক বড় জোর ২৫ জনের কার্ড করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘মানুষ যাতে সমস্যায় না পড়েন সেটা দেখতে হবে। আরও একাধিক ডাকঘরে যাতে আধার কার্ডের কাজ চালু করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
চাঁচলের মহকুমাশাসক সব্যসাচী রায়ও বলেন, ‘‘কীভাবে সমস্যা এড়িয়ে সুষ্ঠভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে ডাকঘর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।’’