খুশি: মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিন ইংরেজি পরীক্ষার শেষে। বুধবার কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে বইয়ের পাতাতেই আটকে ছিল মন। পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পৌঁছেও চিন্তা, ইংরেজি প্রশ্ন কেমন হবে?
আচমকাই পিঠে হাত। পরীক্ষার্থী পাশ ফিরতেই তার কপালে পরিয়ে দেওয়া হল চন্দনের ফোঁটা। কেউ হাতে তুলে দিলেন একটি কলম। কেউ আবার ধরিয়ে দিলেন জলের বোতল। পিঠে হাত রেখে একজন বললেন, “ভাল করে পরীক্ষা দিও।” পরীক্ষার্থী কিছু বলার আগেই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অভিভাবক দৌড়ে গিয়ে বললেন, “পড়াগুলো মনে মনে ভাবতে থাক, বুঝলি!” একই দৃশ্য শহরের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে। এমনকি, কিছু গ্রামের পরীক্ষাকেন্দ্রেও। কোথাও টিএমসিপির কর্মীরা, কোথাও আবার এবিভিপির কর্মীরা দাঁড়িয়ে রইলেন পরীক্ষার্থীদের ‘স্বাগত’ জানাতে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাশে কারা রয়েছে, তা দেখাতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে এ ভাবেই প্রতিযোগিতা চলল কোচবিহারে। কোচবিহার শহরের রামভোলার স্কুলের সামনে জলের বোতল, কলম হাতে দাঁড়িয়েছিলেন টিএমসিপির সদস্যেরা। মাথাভাঙা ও দিনহাটা শহর থেকে জিরাণপুরের মতো গ্রামের স্কুলেও টিমসিপি সদস্যদের দেখা যায় পরীক্ষার্থীদের ‘বরণ’ করতে। টিএমসিপির জেলা সভাপতি নরেন দত্ত বলেন, “পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতেই আমরা রাস্তায়। জেলা জুড়েই এটা করা হচ্ছে। প্রত্যেক বছরই করা হয়। অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।”
এবিভিপির পক্ষ থেকেও কোচবিহার শহরের স্কুল তো বটেই, ঘুঘুমারি হাইস্কুলের সামনে থেকে শুরু করে তুফানগঞ্জের একাধিক স্কুল, দিনহাটা-সহ আশপাশের এলাকার একাধিক স্কুলে পরীক্ষার্থীদের ‘বরণ’ করা হয়। এবিভিপির কোচবিহার জেলা প্রমুখ অনিরুদ্ধ দে সরকার বলেন, “আমরা সবসময়ই ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকি। পরীক্ষার জন্য ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে চন্দনের ফোঁটায় শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।”
তবে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে দু’দলের এহেন প্রতিযোগিতা যে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক পুষ্ট করারই পন্থা, সেই কথাই বলছে রাজনৈতিক মহল। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হারের পরে বিজেপি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলে জেলায়। পাল্লা দিয়ে শক্তি বাড়াতে সচেষ্ট হয় এবিভিপি। কোচবিহার কলেজ, এবিএন শীল থেকে শুরু করে জেলার প্রত্যেক কলেজেই সংগঠন বেড়েছে এবিভিপির। স্বাভাবিক ভাবেই দু’পক্ষের মধ্যে লড়াইও বেড়েছে। কেউ কাউকে কোনও জায়গা দিতে রাজি নয়। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে উভয়পক্ষই।
টিএমসিপির সায়নদীপ গোস্বামী বলেন, “ইমেজ বৃদ্ধির চেষ্টা আমরা করছি না। এটা যে কেউ করতে পারে। আমরা বরাবর মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় সহায়তা কেন্দ্র চালু রাখি।” এবিভিপিরও দাবি, তারা নিজেদের কর্মসূচির বাইরে অন্য কিছু ভাবছে না।
দুই পক্ষের প্রতিযোগিতার মাঝে অভিভাবকদের অনেকেই অবশ্য খুশি। রামভোলা স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে এক অভিভাবক বললেন, “কে কোন সংগঠন করে জানি না। তবে সবাইকে সাহস দিচ্ছে, এটা মন্দ কী! সেই সঙ্গে পরীক্ষার সময় বেশি হইচই যাতে না হয়, সেইদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।”