দলের জেলা সভাপতির নির্দেশের অপেক্ষা না করে দক্ষিণ দিনাজপুরে জোটের পক্ষে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেসের জেলা ও ব্লক স্তরের একাংশ নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার বালুরঘাটের প্রাচ্যভারতী এলাকায় জেলা কংগ্রেস নেতা গোপাল দেবের নেতৃত্বে উপস্থিত দলের ব্লক নেতৃত্ব ও কর্মীদের উপস্থিতিতে জোট প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে এ জেলার তিনটি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন পেশ করেছে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়। আজ, শুক্রবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। তার ২৪ ঘন্টা আগে দলের ভিতরে জোটের পক্ষে জোরদার সওয়াল ওঠায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি রীতিমত অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন। জেলা যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি গোপাল দেব বলেন, ‘‘জোটের সিদ্ধান্ত এআইসিসি এবং প্রদেশ নেতৃত্বের। সেখানে জেলা স্তরে টালবাহানার কোনও জায়গা নেই। যেখানে হাত চিহ্ন থাকবে, সেখানে আমরা কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করব।’’ বাকি আসনগুলিতে জোটের বাম প্রার্থীদের হয়ে তাঁরা লড়বেন বলে গোপালবাবু জানিয়েছেন।
গত সোমবার নীলাঞ্জনবাবুর নির্দেশের অপেক্ষা না করে জেলার ৬টি আসনেই বামেদের প্রার্থী মনোনয়নে জেলা ও ব্লক স্তরের অনেক কংগ্রেস কর্মী স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মিছিলে হাঁটেন। এরপরই মনোনয়নের শেষ দিনে হরিরামপুর, গঙ্গারামপুর ও তপন আসনে প্রার্থী দিয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি বামেদের উপর চাপ তৈরি করেছেন বলে কংগ্রেসের অন্দরেই বিতর্ক দানা বাঁধে। হরিরামপুর আসনে নীলাঞ্জনবাবু নিজেই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তপন ও গঙ্গারামপুরে কংগ্রেস প্রার্থী যথাক্রমে সূর্যনাথ পাহান ও গৌতম দাস। বামেদের কাছ থেকে একটি আসন দাবির জন্য নীলাঞ্জন এই কৌশল নেন বলে অভিযোগ।
কিন্তু জেলা সিপিএম সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, গঙ্গারামপুর আসনটি কংগ্রেসের জন্য রেখে বাকি আসনগুলিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল রাজ্য নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস হরিরামপুর ও তপন—দুটি আসনের দাবিতে অনড় থাকায় বাধ্য হয়ে গঙ্গারামপুর আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেওয়াল লিখন থেকে এলাকায় প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। মনোনয়ন পত্রও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে পিছিয়ে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই।’’
তবে জোটের স্বার্থে এখনও আলোচনা পথ খোলা আছে বলে দাবি করে নীলাঞ্জন বলেন, ‘‘১ এপ্রিল বিকেল অবধি আলোচনা হতে পারে। জোটের স্বার্থে কংগ্রেস যে কোনও আসন ছেড়ে মনোনয়ন তুলে নিতে প্রস্তুত। তারপরেও যদি দাবি মতো আসন ছেড়ে সিপিএম জোট না করে, তার প্রত্যুত্তর বামেরা পাবে।’’ নীলাঞ্জনের ওই বক্তব্য নিয়েই বামজোটের নেতারা তো বটেই, কংগ্রেসের অনেক নেতা ও নিচু তলার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যার প্রতিফলন বালুরঘাটে এ দিনের কংগ্রেসের সভায় দেখা গিয়েছে। সভায় উপস্থিত গঙ্গরামপুরের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ব্যোমকেশ সিংহ, বংশীহারি ব্লক থেকে দলের জেলা নেতা লুতফর রহমান, তপন থেকে ফজলে হক, অসীম সিংহরায়দের মতো হিলি, হরিরামপুরেরও একাধিক কংগ্রেস কর্মীরা নীলাঞ্জনের ভূমিকার সমালোচনা করে অভিযোগ করেন, দলের মধ্যে কোনও আলোচনা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
যে জেলায় একটি গ্রামপঞ্চায়েত কংগ্রেসের দখলে নেই, সেখানে জেলা কংগ্রেস সভাপতি এমন দাবি করছেন কেন, তা নিয়ে দলে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশই জানাচ্ছেন, হরিরামপুর ও তপনে বামেদের ভাল সংগঠন থাকা সত্ত্বেও নীলাঞ্জন আসন দাবি করায় আদতে আসনগুলিতে তৃণমূলই সুবিধা পেয়ে যাবে বলে অনেকে মনে করছেন। সিপিএম এবং আরএসপি জানিয়েও দিয়েছে, কোনও আসনই তারা ছাড়তে পারবে না। তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন নিচু তলার কর্মীরা।