লোগো: স্কুলের পোশাকে পকেটের জায়গায় লোগোতে পদ্মফুলের ছবি। তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের পোশাকের ‘লোগো’ ঘিরে হইচই পড়ে গেল শিলিগুড়ি বয়েজ় প্রাইমারি স্কুলে। শনিবারের ঘটনা। এ বারই প্রথম ওই স্কুলের পোশাকে লোগো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পোশাক তৈরি হয়ে বৃহস্পতিবার এসে যায় স্কুলে। সেদিন থেকেই পোশাক বিলি শুরু হয়। দেখা যায় লোগোতে পদ্মফুলের ছবি রয়েছে। অভিযোগ ওঠে লোগোতে বিজেপির প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে। শনিবার পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার এবং তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতারা স্কুলে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করেন।
এ দিন স্কুলে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে এমন কেন হল তা জানতে চান রঞ্জনেরা। স্কুল পরিদর্শক থেকে শুরু করে জেলাশাসককেও জানানো হয়। পুলিশ ডাকা হয়। যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী পোশাক তৈরি করেছে তাদের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ। জেলাশাসকের নির্দেশে সর্বশিক্ষা প্রকল্পের আধিকারিক গিয়ে তদন্তে নির্দেশ দেন। এই কাজ অবৈধ বলেও জানিয়ে দেন।
এই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং যারা পোশাক তৈরি করেছেন উভয়েই দায়ী বলে জানিয়েছেন সর্বশিক্ষা প্রকল্পের ডিপিও অমর বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘অবৈধ ঘটনা। কমিটি গড়ে তদন্ত হচ্ছে। পোশাক তৈরির প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত ত্রুটিও রয়েছে। স্কুলের প্রতীক ব্যবহার না করে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীক দিয়ে পোশাকটি হয়েছে।’’ পোশাক তৈরির বরাত নিয়ম মাফিক টেন্ডার করেও হয়নি বলেও অভিযোগ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘শিক্ষকদের মত নিয়েই বানাতে দেওয়া হয়েছে। লোগো কেমন হবে তার ছবিও দিয়েছিলাম। তা ব্যবহার করেনি। সমস্যা হলে তা জানায়নি। বানানোর পরে দেখেনি, সেই দোষ স্বীকার করছি।’’
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সাগরিকা স্বনির্ভর গোষ্ঠী পোশাক বানিয়েছে আগেও তারা স্কুলের পোশাক করেছে। আগে ৪০০ টাকায় এক জোড়া পোশাক দিতে হত। তখন লোগো ছিল না। এ বছর ২০০ টাকা মজুরি বেড়েছে। তাই লোগো দেওয়ার কথা ভাবা হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী বিনা বিশ্বাস বলেন, ‘‘লোগোতে পদ্মফুল-সূর্য, দুই দিকে দুটো মানুষ-সহ অনেক কিছু ছিল। জামাতে এত কিছু দিয়ে লোগো করতে সমস্যা দেখে শুধু পদ্মফুল দেওয়া হয়েছে। এখন বুঝতে পারছি ভুল হয়েছে।’’
ডিপিও জানান, ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে পদে রেখেই তদন্ত হবে। তদন্তের পরে যেভাবে জেলাশাসক নির্দেশ দেবেন সেভাবে ব্যবস্থা হবে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা জানান, শুক্রবার রাতে এক অভিভাবক তাঁকে অভিযোগ করেন। ওই জামা আনার পরে পর্যটনমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানান। রঞ্জন বলেন, ‘‘পড়ানোর নাম করে দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরএসএস-এর হয়ে কাজ করছেন। স্কুলের লোগোর জায়গায় তিনি বিজেপির পদ্ম ফুল লাগিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সেই পোশাক বিলি করেছেন।’’ অভিযোগ, আরএসএস বিজেপি মিলে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট। যারা বানিয়েছেন তাদের কত টাকার প্রলোভন দেখানো হয়েছে তা তদন্তের দাবি তোলেন।
বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায় চৌধুরীর কথায়, ‘‘স্কুলটি পরিচালন সমিতির তৃণমূলের। পদ্ম ভারতের জাতীয় ফুল। দুর্গা পুজোয় লাগে। এর পর কী তৃণমূল বলবে পদ্ম ছাড়া পুজো করতে।
ঘুমিয়েও এখন স্বপ্নে বিজেপি
দেখছেন তাঁরা।’’