অনিয়ম: বারবার বলা হচ্ছে দূরত্ববিধি বজায় রাখতে। মাস্ক পরতে। তবুও বুধবার এমনই ছবি ধরা পড়লো শিলিগুড়ির জলপাইমোড়ে। ছবি: স্বরূপ সরকার
শিলিগুড়ি শহরে সংক্রমণ রুখতে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ৯টি ওয়ার্ডে সম্পূর্ণ লকডাউনের কথা জানাল জেলাপ্রশাসন। বুধবার বিকেলে শিলিগুড়িতে সার্কিট হাউজে দার্জিলিং জেলা টাস্কফোর্সের বৈঠক হয়। অন্য দিকে জলপাইগুড়িতে বৈঠক করেন জেলাশাসক। শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৩ টি ওয়ার্ড দার্জিলিং জেলার অধীনে। আর সংযোজিত এলাকার ১৪ টি ওয়ার্ড জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে। দুই জেলাপ্রশাসনই আলাদা করে বৈঠকের পর মোট ৯টি ওয়ার্ডে আপাতত সাত দিনের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ন’টি ওয়ার্ড হল ২, ৪, ৫, ২৮, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪৩ এবং ৪৬। আরও কিছু এলাকা তার মধ্যে অন্তভুর্ক্ত করার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবে প্রশাসন। তার মধ্যে শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামাঞ্চলের কিছু এলাকার কথা উঠেছে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘সংক্রমণ রুখতে ওয়ার্ড ধরে লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দার্জিলিং জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার ৫টি ওয়ার্ডে সম্পূর্ণ লকডাউন বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে কার্যকর হবে। জেলার অধীনে থাকা ওয়ার্ডগুলোতে আক্রান্তের ৪৫ শতাংশ এই পাঁচটি ওয়ার্ড থেকে হয়েছে। এ ছাড়া জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে কিছু ওয়ার্ড রয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক জানাবেন।’’ জলপাইগুড়ি জেলাশাসক অভিষেক তেওয়ারি বলেন, ‘‘এই জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার চারটি ওয়ার্ড ৩৭, ৩৮, ৩৯ এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ রুখতে সেগুলো কনটেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হল। সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন কার্যকর হবে।’’ লকডাউনে ওয়ার্ডে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে ছাড়া রয়েছে।
জুন থেকে শিলিগুড়ি শহরে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়তে থাকে। এ দিন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬৪ জনে পৌঁছেছে। মৃত অন্তত ২৫ জন। তার মধ্যে শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে পরিস্থিতি উদ্বেগের হয়ে উঠেছে। সংক্রমণ এবং মৃত্যু রুখতে সম্পূর্ণ লকডাউনের দাবি তোলেন বাসিন্দারা। সে কথা আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথম লেখা হয়। উত্তরবঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুশান্ত রায় শিলিগুড়ি শহরকে বাঁচাতে সম্পূর্ণ লকডাউনের ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান। গত শনিবার মতামত নিতে উত্তরকন্যায় বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলাশাসক ছাড়া পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলরদের একাংশ এবং তৃণমূলের নেতানেত্রীদের একাংশকে সমাজসেবী হিসাবে ডাকা হয়। বৈঠকে সম্পূর্ণ লকডাউন তো পরের কথা এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের কথাও কেউ আলোচনা করেননি বলে অভিযোগ। এর পরেই দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা শহরকে বাঁচাতে সম্পূর্ণ লকডাউনের আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পাঠাতে অনুরোধ করেন।
এরপর জেলাপ্রশাসনের তরফে রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের প্রস্তাব পাঠানো হয়। মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের তরফে সংক্রমণ রুখতে এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের নির্দেশ জেলাশাসকদের পাঠানো হয়। বুধবার টাস্ক ফোর্সের বৈঠক করে এলাকা চিহ্নিত করে লকডাউন করার কথা জানানো হয়।
মাটিগাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের দাবি, গোটা শহরেই লকডাউন করা জরুরি। দার্জিলিঙের সাংসদ বলেন, ‘‘শহরকে বাঁচাতে সম্পূর্ণ লকডাউন একমাত্র পথ বলে মনে করি।’’