জাতীয় সড়কে তিস্তা নদীর উপর চলছে দ্বিতীয় সেতুর কাজ। নিজস্ব চিত্র
৬৬ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য জমি পাওয়ার কথা ছিল এক বছরে। কিন্তু সেই কাজ করতেই লেগে গেল বারোটা বছর। অবশেষে জলপাইগুড়ি জেলায় পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সমস্ত জট কেটে গেল বলে দাবি জেলা প্রশাসনের।
২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের জন্য জলপাইগুড়ি জেলায় জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। আর এই বুধবার থেকে শুরু হয়েছে জমিদাতাদের শেষ পর্যায়ের ক্ষতিপূরণ বিলি। গত বারো বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে জেলায় প্রায় ৮৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে প্রশাসন। আরও একশো একরের কাছাকাছি জমি প্রশাসন অধিগ্রহণ করে নিজেদের কাছে রেখেছে। দ্রুত সেগুলি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে। এর ফলে, পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়ক তৈরিতে আর জমি জট থাকল না বলেই দাবি জেলা প্রশাসনের।
২০০৮ সালে যখন অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনই ধূপগুড়ি লাগোয়া এলাকার জমিদাতারা জমি দিতে বেঁকে বসেন। সেই সময় বাম পরিচালিত জেলা পরিষদ জট কাটাতে মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা নেয়। তারপরে বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে, একাধিক নির্দেশিকা বের হয়েছে কিন্তু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। যার জেরে থমকে রয়েছে মহাসড়ক তৈরির কাজও। এ দিকে ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা জাতীয় সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় জাতীয় সড়কের হালও ফেরেনি। একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত মহাসড়কের কাজের জমিজট মিটিয়ে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রশাসন এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ঘনঘন সমন্বয় বৈঠকে বসতে শুরু করেন। প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, তাতেই এই ফেব্রুয়ারিতে জমিজট কাটার মুখে।
অধিগ্রহণে দেরি হওয়ায় ক্ষতিপূরণের হারও বেড়েছে। শুরুতে যে এক ডেসিমেল বাস্তুজমির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল তার হার বাড়িয়ে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা করা হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের পরে জেলা প্রশাসনের শীর্ষস্তরে বদল হয়। তারপরেই জমি জট নিষ্পত্তির গতি বেড়ে যায়। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “সকলের সঙ্গে আলোচনা করে, বুঝিয়ে সুঝিয়ে, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েই পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে যা করার কথা ছিল সবটাই হয়েছে।”
দেশের বাকি প্রান্তে পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার অংশের কাজ। শেষ যে প্রান্তে জট হয়েছিল সেই উল্লাডাবড়িতে আজ বৃহস্পতিবার পরিদর্শন হওয়ার কথা। সেখানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং ভূমি দফতরের সকলেই থাকবেন। ভূমি দফতর থেকে এ দিনই বাকি জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণের পর্ব মিটিয়ে ফেলা শুরু হয়েছে বলে খবর।