পুরনো হারে মজুরি, ভিন্‌ রাজ্যে গিয়েও দুর্ভোগ

থমকে থাকা বহুতল থেকে শুরু করে নানা প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করতে লাক্সারি বাস বা বিমানে শ্রমিকদের ভিন্‌ রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হলেও কাজের নিশ্চয়তা কত বা বাড়তি মজুরি আদৌ মিলবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২০ ০৫:৫০
Share:

কাজের নিশ্চয়তা কত বা বাড়তি মজুরি আদৌ মিলবে কি শ্রমিকদের?

মোটা অঙ্কের কমিশনের লোভে ভিন্‌ রাজ্যে শ্রমিক পাঠাতে মালদহে সক্রিয় শ্রমিক সরবরাহকারী ও কমিশন এজেন্টরা। থমকে থাকা বহুতল থেকে শুরু করে নানা প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করতে লাক্সারি বাস বা বিমানে শ্রমিকদের ভিন্‌ রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হলেও কাজের নিশ্চয়তা কত বা বাড়তি মজুরি আদৌ মিলবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভিন্‌ রাজ্যে ফেরা শ্রমিকদের অনেকে পুরনো হারেই মজুরি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু ফের ফেরার উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই মজুরিতেই কাজ করছেন সেই শ্রমিকরা।

Advertisement

তা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। প্রশাসন কেন এ খোঁজ করে পদক্ষেপ করছে না, সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। প্রশাসন অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।

জানা গিয়েছে, লকডাউনের সময় মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, কেরল, হরিয়ানার মতো রাজ্য থেকে মালদহ জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরে আসায় সেখানে বিভিন্ন নির্মাণকাজ থমকে যায়। ফলে বিভিন্ন সংস্থা লোকসানের মুখে পড়ছে। সেই কারণেই সেই সব সংস্থা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিতে গোটা লাক্সারি বাস ভাড়া করার পাশাপাশি শ্রমিকদের বিমানের খরচও দিচ্ছে। অভিযোগ, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশনের লোভে শ্রমিক সরবরাহকারী ও কমিশন এজেন্টদের অনেকে মালদহে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

Advertisement

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, তাঁরা ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাড়তি মজুরি এবং লাক্সারি বাস বা বিমানে কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকাও জমা দিচ্ছে। জানা গিয়েছে, তা পেয়ে ইতিমধ্যে মালদহ জেলার কালিয়াচকের তিনটি ব্লক, রতুয়া ১, মানিকচক ব্লকের কয়েক হাজার শ্রমিক করোনা পরিস্থিতিতেই বিভিন্ন রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁরা কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

সে সব শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, শ্রমিক সরবরাহকারী বা কমিশন এজেন্টরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, বাস্তবে তার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মিল নেই।

মুম্বইয়ের বান্দ্রায় থাকা এমনই এক পরিযায়ী শ্রমিক আতাউর রহমান বলেন, ‘‘প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে কাজ করছি। ৭০০ টাকা করে মজুরি দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। ট্রেন না চলায় ফেরার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কমিশন এজেন্ট এখন আর ফোন তুলছেন না।”

সিটুর জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, ‘‘শ্রমিক সরবরাহকারী এবং কমিশন এজেন্টদের অনেকে শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে নিয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু সেখানে প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে না।’’ অল ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়নের মালদহ জেলা সম্পাদক ইব্রাহিম শেখ বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট শ্রমিক আইন না থাকায় এ জেলার শ্রমিকরা ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে শোষিত হচ্ছেন। শ্রমিকদের টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে শ্রমিক সরবরাহকারী ও কমিশন এজেন্টরা।’’

জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘শুনেছি কিছু দালালের খপ্পরে পড়ে বেশ কিছু শ্রমিক ভিন্‌ রাজ্যে চলে যাচ্ছেন এবং মজুরি কম পাচ্ছেন। বিষয়টি প্রশাসনিক স্তরে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement