জাগির বস্তিতে করিমের বাবার সঙ্গে কথা রব্বানির। নিজস্ব চিত্র
এলাকায় কাজ হয় জমিতে চাষ করতে হবে, না হলে দোকান দিতে হবে। বাইরে যা রোজগার হয়, খেতে শ্রমিকের কাজ করে তার কিছুই মেলে না। তাই এলাকার যুবকদের বড় অংশই ভিন্-রাজ্যে কাজ করেন বলে দাবি স্থানীয়দের। ‘‘তেমন ভাল কাজ থাকলে বাড়ির ছেলে কি আর বাইরে যেত?’’ আফসোস করে বলে ফেললেন হরিয়ানার পানিপথে দুর্ঘটনায় মৃত মহম্মদ করিমের আত্মীয়েরা। পরিবারের পাঁচ সদস্য-সহ ওই পরিযায়ী শ্রমিকের ভিন্ রাজ্যে মৃত্যুর পরে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এলাকার কর্মসংস্থান নিয়ে।
স্থানীয়দের দাবি, ইসলামপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় কিছু চা কারখানা ছাড়া, তেমন কোনও কারখানা নেই। কয়েকটি জায়গায় কারখানা করার প্রস্তাব হলেও, তা আজও হয়নি বলেই অভিযোগ। ফলে, কাজের খোঁজে ভিন্-রাজ্যে নিয়মিত পাড়ি দেন স্থানীয়েরা। ইসলামপুরের জাগির বস্তির বাসিন্দা মৃত করিমের বাড়ির আশপাশে বেশির ভাগ বাড়ির ছেলেরা কেউ দিল্লি, কেউ হরিয়ানা, কেউ আবার হায়দরাবাদে রয়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। ওই এলাকারই এক যুবক মুন্সি খান হায়দ্রাবাদে একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় থাকলে, জমিতে চাষ করতে হত। তাতে দিনে দু’শো-তিনশো টাকা আয় হয়। আর হায়দরাবাদে দিনে কমপক্ষে হাজার টাকা রোজগার হয়। তাই চলে গিয়েছি সেখানে।’’
ইসলামপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার ডালটন বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার বিষয়টি শুনেছি। কোনও কিছু করার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আমাদের দফতরে নির্দেশ এসে পৌঁছায়নি। নির্দেশ পেলে সেই হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শুক্রবার জাগির বস্তিতে যান প্রশাসনের কর্তারাও। সকাল প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ সেই বাড়িতে যান রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানিও। মৃত করিমের বাবা মাকে সমবেদনা জানান তিনি। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যদেরও নির্দেশ দেন ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘গতকাল হরিয়ানা সরকার ও ওই এলাকার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা কী সহযোগিতা করবেন জানি না। তবে আমরা চেষ্টা করছি, সরকারি ভাবে সহযোগিতা করার।’’
তবে কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে রব্বানি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছেন সে কারণে। কিছু কিছু জায়গায় শিল্প শুরুও হয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে এই এলাকাতেও শিল্প গড়ে তোলার।’’ ভিন্-রাজ্যে শ্রমিকদের যাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, গ্রামের কেউ আগে থেকেই ভিন্-রাজ্যে থাকলে, বাকিদের সেখানে কাজের খোঁজ দেন। সে কারণেই হরিয়ানা, দিল্লি, কেরলে এই এলাকার যুবকেরা বেশি যান।