কুলিক থেকে কাঠামো নিয়ে ঘরের পথে। নিজস্ব চিত্র।
রায়গঞ্জ শহরের নেতাজি সুভাষ কলোনির সুমন রায় নির্মাণশ্রমিক। বুধবার রায়গঞ্জের বন্দর এলাকায় কুলিক নদীতে নেমে দুর্গাপ্রতিমার কাঠামো সংগ্রহ করতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু কেন? সুমন বলেন, “লকডাউনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ পাইনি। আনলক-পর্বেও নিয়মিত কাজ পাচ্ছি না। গত সাত মাস ধরে সংসারে অনটন লেগে রয়েছে। তাই কিছু টাকা রোজগারে প্রতিমার কাঠামো সংগ্রহ করে বিক্রি করছি।”
রায়গঞ্জের ভাঙা রোড এলাকার বাসন্তী সাহানিকেও এ দিন শহরের খরমুজাঘাট এলাকার কুলিক নদীতে নেমে প্রতিমার কাঠামো সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামী সাত মাস ধরে নিয়মিত দিনমজুরির কাজ পাচ্ছে না। স্বামী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে খুব সঙ্কটে পড়েছি। সংসার চলছে না। তাই এমন কাজে নেমেছি।”
এ দিন বন্দর ও খরমুজাঘাট এলাকার কুলিক নদীতে নেমে ৩০ জনেরও বেশি পুরুষ ও মহিলাকে দুর্গাপ্রতিমার কাঠামো সংগ্রহ করতে দেখা গিয়েছে। তাঁরা কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ পরিচারিকা, রিকশা চালক, ভ্যানচালক ও ঠিকাশ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের সকলেরই দাবি, কাজ না পেয়ে সাত মাস ধরে আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন। তা-ই রোজগারের আশায় কাঠামো সংগ্রহে নদীতে নেমেছেন।
মিলনপাড়ার রিকশা চালক জয়ন্ত নুনিয়া বলেন, “খরমুজাঘাটে নদী থেকে দুটি কাঠামো পেয়ে রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জের কুমোরটুলিতে তা বিক্রি করে ৮০০ টাকা পেয়েছি।”
নেতাজি কলোনির ঠিকাশ্রমিক রাজ রায় বলেন, “প্রতি বছর বর্ষায় বন্যা হলে নদীর ধারের বহু কাঁচাবাড়ি ভেঙে যায়। সে সব বাড়ি মেরামতের জন্য দু’জন এক হাজার টাকায় আমার কাছ থেকে দুটি কাঠামো কিনেছেন।”
রায়গঞ্জের পুরপ্রধান সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, “শহরের দুটি ঘাটের নদীতে এখনও পর্যন্ত দেড়শোরও বেশি দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। পুরসভার সাফাইকর্মীরা প্রতিমার কাঠামোগুলো বাসিন্দাদের সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করেছেন।”