প্রতীকী ছবি।
ফের ধর্ষণের ঘটনা কুমারগ্রামে। বারবিশায় শিশুকন্যা ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার ১২ দিনের মাথায় ফের ধর্ষণের খবরে চাঞ্চল্য। কুমারগ্রাম থানার কামাখ্যাগুড়িতে এক কিশোরীকে কয়েক মাস ধরে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী এক প্রবীণ। পুলিশ সূত্রের খবর, ধর্ষণের ফলে সম্প্রতি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে ওই কিশোরী। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দা ১৪ বছরের ওই কিশোরী নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা ও দাদু দু’জনেই অসুস্থ এবং শয্যাশায়ী। মা এলাকায় পরিচারিকার কাজ করেন। কাজের সুবাদে রোজ সকালে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সন্ধের পর ফিরে আসেন। অভিযোগ, এই সুযোগে পেশায় মিস্ত্রি স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি মেয়েটিকে একাধিকবার বিভিন্ন জিনিসের প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করত। মেয়েটি বাধা দিলে তাকে ও পরিবারের লোকজনের প্রাণনাশের ভয় দেখাত ওই ব্যক্তি। পরিবার সূত্রের খবর, কিছুদিন ধরে মেয়েটির শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ করেন তার মা। তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার পর জানা যায়, মেয়েটি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এরপর মায়ের কাছে সব খুলে বলে মেয়েটি। মেয়েটির মা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বিপ্লব সরকার ও কামাখ্যাগুড়ি নারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নন্দিতা মজুমদারকে সমস্ত বিষয়টি জানান। এরপরই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। মেয়ের মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাতে কামাখ্যাগুড়ির পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
কুমারগ্রাম থানার আইসি বাসুদেব সরকার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’
এমন একটি ঘটনায় নিন্দায় মুখর হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্রুত অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
সুপার মার্কেটে ধর্ষণের ঘটনায় বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সেই এলাকা থেকেই ভোটে জিতেছেন তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাধিপতি শীলা দাস সরকার। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির বিপ্লব। বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির সহসভাপতিও তিনি। বিপ্লব বলেন, ‘‘কুমারগ্রামে পরপর ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। তার জন্য সভাধিপতিকে পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছি।’’
শীলা বলেন, ‘‘ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের দায় সবচেয়ে বেশি। তাই সবার আগে পঞ্চায়েত সদস্যকে পদত্যাগ করার উচিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনায় রাজনীতির রং লাগানো উচিত নয়। যিনি অভিযুক্ত তার যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এবং নির্যাতিতা মেয়েটি যাতে সুবিচার পায়, সেটাই আমাদের দেখা উচিত। পুলিশের কাছে সেই আর্জি জানিয়েছি।’’
এদিকে, এই ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নির্যাতিতার মা। স্বামী এবং শ্বশুর শয্যাশায়ী। পরিচারিকার কাজ করে দু’বেলা খাবার জোটানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তার উপর এই ঘটনায় তাঁর মাথায় যেন বাজ পড়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে মামলা চালাব? গর্ভবতী মেয়েটাকে নিয়ে চোখে শুধু অন্ধকার দেখছি। এ কী হল আমার জীবনে!’’
বারবিশায় শিশুকন্যা ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় ১০ দিনের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও পুলিশ সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হোক, সেই দাবি করেছেন বাসিন্দারা।