সাফল্য: মা-বাবার সঙ্গে প্রিয় বই সঞ্চয়িতা হাতে মাধ্যমিকে রাজ্যের সম্ভাব্য দ্বিতীয় উত্তরবঙ্গে সেরা কৌশিকী সরকার। ছবি: স্বরূপ সাহা।
অফলাইন লেখাপড়াতেই সাবলীল। তবে করোনাকালে স্কুল, টিউশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভরসা যুগিয়েছে অনলাইন-ই। ওই দু’বছর অনলাইনে লেখাপড়াই তাকে এই জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করেছে। এবারের মাধ্যমিকে ৬৯২ নম্বর পেয়ে সম্ভাব্য দ্বিতীয় স্থানাধিকারী মালদহের গাজলের কৌশিকী সরকারের মত এমনই। বাবা-মা দু’জনেই শিক্ষক। একমাত্র মেয়ে কৌশিকীর বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। আর্ত মানুষের সেবা করা লক্ষ্য। আর তাই বিজ্ঞান নিয়ে আরও ভাল করে পড়াশোনা করতে চায় কৌশিকী।
কৌশিকীর বাড়ি গাজলের বিধানপল্লিতে। গাজলের বেসরকারি স্কুল আদর্শবাণী আকাদেমির ছাত্রী। কৌশিকীর বাবা মৃণালকান্তি সরকার গাজলের আলাল হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক। মা চন্দ্রিকা লাহা সরকার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মেহেন্দি পাড়া জুনিয়র বেসিক স্কুলের শিক্ষিকা। একমাত্র ভাই অর্কপ্রভ একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। কৌশিকী জানিয়েছে, তাঁর লেখাপড়ার নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা ছিল না। যখনই মন চাইত, তখনই সে লেখাপড়া করত।
ভূগোল বাদে কৌশিকীর প্রতিটি বিষয়েই গৃহশিক্ষক ছিল। তবে ভূগোলটা বাবাই পড়াতেন। বড় হয়ে কৌশিকী ডাক্তার হতে চায়। কৌশিকীর মা চন্দ্রিকা বলছিলেন, ‘‘কৌশিকীর ঠাকুরদা গোপীকান্ত সরকারের খুব ইচ্ছে নাতনি বড় হয়ে ডাক্তার হোক। মানুষের সেবা করুক। কৌশিকী ঠাকুরদার সেই স্বপ্নকেই সাকার করতে চায়। এই মাধ্যমিকের ফল সেই স্বপ্ন পূরণে মেয়েকে উৎসাহিত করবে বলে আমি মনে করি।’’
শুধু কৌশিকী বা ঠাকুরদাই নন, বাবা-মাও চাইছেন যে মেয়ে ডাক্তার হয়ে আর্ত মানুষের সেবা করুক। লেখাপড়ার পাশাপাশি কৌশিকী গান ও আবৃত্তি চর্চা করে নিয়মিত। নিজে না খেললেও ব্যাডমিন্টন খুব প্রিয়। শরৎচন্দ্রের বই পড়তেও ভালবাসে। লুকিয়ে গল্পের বই পড়ারও অভ্যেস আছে। সময় পেলে আইপিএল ক্রিকেট দেখে। ভাইয়ের সঙ্গে খুনসুটিও তো প্রতিদিনই লেগে থাকে।
পরীক্ষার এই ফল নিয়ে কৌশিকী বলে, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল হবে এটা আশা করেছিলাম। কিন্তু রাজ্যের মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান যে পাব, কল্পনাও করিনি। আমি খুব খুশি। তবে এর জন্য বাবামায়ের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য।’’
কৌশিকীর এই অভাবনীয় সাফল্যে স্কুলে ছিল এ দিন খুশির হাওয়া। দুপুরেই ডেকে নিয়ে স্কুলের তরফে সংবর্ধনা দিয়েছেন স্কুলের কর্ণধার আশুতোষ সরকার, প্রধান শিক্ষক মনোজ সাহা মণ্ডল সহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। জেলার মেয়ের এমন সাফল্যে খুশি সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘‘কৌশিকী মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়ে মালদহ জেলাকে গর্বিত করেছে। আমি ওর সাফল্য কামনা করি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।