সমীক্ষা: পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতা। নিজস্ব চিত্র
বেলা বারোটা। ইংরেজবাজার শহরের সদরঘাট পুরাটুলির বাড়িতে তখন পাঁচমিশেলি তরকারি রান্না করছিলেন গৃহবধূ রমা দাস। সে সময়ই বাড়ির বাইরে থেকে হাঁক এল এক কিশোরী কণ্ঠে, ‘‘কাকিমা, বাড়িতে আছেন?’’
গ্যাসের আঁচ কমিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে রমাদেবী দেখেন, তাঁর বাড়ির দাওয়ায় স্কুলের পোশাক পড়া জনা সাতেক ছাত্রী দাঁড়িয়ে। তাঁদের সকলেরই হাতে কাগজ আর কলম। তাঁর কৌতূহলী প্রশ্নের আগেই প্রাচী সরকার নামে এক কিশোরী তাঁকে জানাল তাদের আসার কারণ। তার পরেই একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগল রমাদেবীকে। ঘরে জলের পাত্র ভাল করে ঢাকা দিয়ে রাখা হয় কিনা, বাড়ির ছাদে বা কোনও নিচু জায়গায় জল জমে আছে কি না, খালি টব বাইরে ব্যবহার না হয়ে পড়ে আছে কিনা, রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো হয়—এমনই তথ্য তাদের জানার বিষয়। কোনওটায় ‘হ্যাঁ’ বা কোনওটায় ‘না’ বলে ঝটপট উত্তর দিয়ে হাঁফ ছাঁড়লেন রমাদেবী। ফের চলে গেলেন রান্নাঘরে। ছাত্রীরাও গেল পাশের বাড়ি।
মালদহ জেলায় ডেঙ্গি ও পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা ও সমীক্ষার কাজে এ বারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছে ‘কন্যাশ্রী বাহিনী’-ও। সেই কর্মসূচিতেই প্রাচী, মন্দিরা, মনীষা, রুদ্রানী, পর্ণাশ্রীদের মতো ইংরেজবাজার শহরের চিন্তামণি চমৎকার বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ‘কন্যাশ্রী’ ছাত্রীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সচেতনতা বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন। তাদের সমীক্ষার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। জেলার ৩৮২টি স্কুলেরই কন্যাশ্রী বাহিনীর সদস্যরা শহর ও গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ডেঙ্গি ও পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ে সমীক্ষার পাশাপাশি সচেতনতার পাঠও দেবে বাসিন্দাদের।
গত বেশ কিছু বছর ধরেই জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় ২০১৬ সালে ১২৪৮ জন, ২০১৭ সালে ১৫৮৯ জন ও ২০১৮ সালে ৮৬৬ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। এ বছরেও এ পর্যন্ত ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছরগুলির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার দুই পুর এলাকা ও ১৫টি ব্লকে ডেঙ্গি সহ পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ে সচেতনতা ও তার পাশাপাশি প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। আগামী ১৫ তারিখ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৪ দিন জেলাজুড়ে বিশেষ সচেতনতা অভিযানও চালানো হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন ‘কন্যাশ্রী বাহিনী’-র ছাত্রীরা সাধারণত বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা প্রচার করত। জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী বাহিনীর সদস্যরা শুধু বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধির সচেতনতার গণ্ডিতেই আবদ্ধ থাকবে না, তারা মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতার কাজেও নিজেদের জড়াতে চায়। বাড়ির ছোটরা যদি কোনও আবদার করে তবে বড়রা তা শোনে, সে কারণেই এই কিশোরীদের ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতায় নামানো হয়েছে।’’
জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ডেঙ্গি সহ পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে কী করণীয় তা নিয়ে একটি প্রশ্নমালা দিয়েছি কন্যাশ্রী বাহিনীর সদস্যদের। বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা সেগুলি পূরণ করে রিপোর্ট আকারে দেবে। সেই প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করা হবে।’’