বোলবাড়ি ও মলানির মাঝে জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথেও চোখে পড়ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
এ যেন সমতলের দুয়ারে কাঞ্চনজঙ্ঘা! উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও দেখা মিলছে রুপোলি তুষার জমে থাকা পর্বত শৃঙ্গের উপর সোনালি রোদের আলো ঠিকরে পড়া নয়নাভিরাম দৃশ্য। সোমবার যা দেখে আবেগে ভেসেছিলেন উত্তরের বাসিন্দাদের অনেকেই। মঙ্গলবারেও একই ধারা বজায় রেখে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াও সরগরম। পরিবেশবিদ থেকে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, আবহাওয়ার আচমকা বদল বা নিম্নচাপ জনিত কোনও সমস্যা নতুন করে তৈরি না হলে আরও ১৫-২০ দিন সমতলে থেকেও দেখা যেতে পারে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম ওই পাহাড় চূড়ো।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সেবা কেন্দ্র সূত্রে খবর, বর্ষা বিদায়ে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবমুক্ত উত্তরবঙ্গ। রোদ ঝলমলে আবহাওয়া। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও গড়ে ১৩-১৪ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। বাতাসে ধূলিকণার প্রভাব কম। সব মিলিয়ে দৃশ্যমানতা বেড়ে যাওয়ায় সমতলের এলাকা থেকেও ওই পর্বত শৃঙ্গের সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে। গত দু’বছরে করোনার জন্য লকডাউনে দূষণের মাত্রা কমে যাওয়াও যার অন্যতম কারণ। ওই সেবাকেন্দ্রের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দোপাধ্যায় বলেন, “সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে না নামলে কুয়াশার ব্যাপক দাপটের সম্ভবনা কম। উত্তরের সমতল এলাকায় সাধারণত নভেম্বরের শেষে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ আরও নেমে যায়। ফলে, কুয়াশার ব্যাপকতার আশঙ্কা আপাতত নেই। যদি না আচমকা আবহাওয়ার বড় কোনও বদল বা নিম্নচাপ তৈরি হয়। সেদিক থেকে তাই, আবহাওয়া ঠিক থাকলে আরও ১৫-২০ দিন কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের সুযোগ মিলতেই পারে।”
পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান নজরুল ইসলাম বলেন, “এই সময়ে পর্বত চূড়োয় বরফ জমতে শুরু করে। মৌসুমী বায়ু বিদায়ে দৃশ্যমানতাও ভাল। সেজন্যই কাঞ্চনজঙ্ঘা কোচবিহারে বসেও দেখা যাচ্ছে। কুয়াশা শুরু না হলে আরও ১৫ দিন এমন অপরূপ দৃশ্য দেখার সম্ভবনা কিন্তু রয়েছে।” পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সদস্য অমিত চন্দ বলেন, “দু’বছরে লকডাউনে দূষণ কমে যাওয়াটাও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে এ ভাবে দেখার সুযোগ মেলার অন্যতম কারণ। গতবারেও দেখেছি।”
এ নিয়ে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়াও। কোচবিহারের বাসিন্দা দীপ্তেন্দু দে বলেন, “স্ত্রী ছাদ থেকে ছবি তুলেছে। সামাজিক মাধ্যমে তা শেয়ার করেছি। মঙ্গলবারের দৃশ্যটা সোমবারেও থেকেও চমৎকার ছিল।” আরেক বাসিন্দা সাগ্নিক চক্রবর্তী বলেন, “দার্জিলিঙের বদলে কোচবিহারে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। দাদা ছবি পাঠিয়েছে। কলকাতায় থাকায় চাক্ষুষ করতে না পারায় আফশোস হচ্ছে।” মঙ্গলবার ভোর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায় ধূপগুড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে। ফালাকাটা থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সব মিলিয়ে খুশি এলাকার বাসিন্দা থেকে পর্যটকেরা।