দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। —নিজস্ব চিত্র।
শিয়ালদহের দিকে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। মালগাড়ির ধাক্কায় ট্রেনের পিছন দিকের দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে বলে খবর। বহু যাত্রী আহত হয়েছেন। চলছে উদ্ধারকাজ। রেল জানিয়েছে, ন’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহত ৪০ জনের বেশি।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের কামরা। —নিজস্ব চিত্র।
ঘটনাস্থল থেকে দার্জিলিং পুলিশের অ্যাডিশনার এসপি অভিষেক রায় বলেন, ‘‘কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে মালগাড়ি ধাক্কা মেরেছে। পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ জন আহত। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে মালগাড়ির ইঞ্জিন বার করতে হবে। সামনে একটি জায়গায় অস্থায়ী ভাবে আহতদের নিয়ে গিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালে পাঠানো হবে। আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল।’’
শিলিগুড়িতে সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি চলছে। তার মাঝে এই দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে। যে লাইনে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির সঙ্গে রেল যোগাযোগের প্রধান লাইন সেটাই। ফলে আপাতত দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে সোমবার সকালে নির্ধারিত সময়েই রওনা দিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে। পিছন দিক থেকে একটি মালগাড়ি এসে ওই ট্রেনে ধাক্কা মারে বলে খবর। সংঘর্ষের তীব্রতায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছন দিক থেকে পর পর দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে পাশে ছিটকে পড়ে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে উদ্বেগ প্রকাশ করে পোস্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘‘এই মাত্র দার্জিলিঙের ফাঁসিদেওয়া এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেলাম। বিশদে এখনও জানতে পারিনি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে মালগাড়ি ধাক্কা মেরেছে শুনেছি। জেলাশাসক, এসপি, চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হচ্ছে।’’ পোস্ট করেছেন রেলমন্ত্রীও।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রেন থেকে ছিটকে যাওয়া কামরা দু’টি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। একটি কামরা লাইন থেকে উপরের দিকে উঠে রয়েছে। তার নীচে ঢুকে রয়েছে মালগাড়ির কামরা। স্থানীয়েরা উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। এলাকায় বৃষ্টিও চলছে। অনেকে ছাতা মাথায় ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, এখনও স্পষ্ট নয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস স্টেশনের আগে দাঁড়িয়ে ছিল কি না, ওই লাইনে কেন মালগাড়ি চলে এল, সিগন্যালের কোনও সমস্যা হয়েছিল কি না, একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে ২০২২ সালে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির কাছে দোমোহনিতে লাইনচ্যুত হয়েছিল বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়। রাঙাপানি স্টেশনের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা সেই স্মৃতি ফিরিয়ে দিল।
২০২৩ সালের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের সঙ্গে একটি মালগাড়ি এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের ধাক্কা লাগে। ২৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়।