পুরাতন মালদহের শ্রমিক মেলায় স্বামীর মৃত্যুর আর্থিক অনুদান পেয়ে চোখে জল মৃত শ্রমিকের স্ত্রী অরুণা ঋষির। —নিজস্ব চিত্র।
কখনও ভিন্ রাজ্যে, কখনও জেলাতেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মালদহের ২৫৮ জন শ্রমিকের। মাত্র এক বছরের মধ্যে জেলায় আড়াইশোরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। বুধবার শ্রমিক মেলায় মৃত শ্রমিকদের পরিবারের হাতে আর্থিক সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি, শ্রমিকদের ভিন্ রাজ্যে যাওয়া ঠেকাতে ‘উৎকর্ষ বাংলা’-কে হাতিয়ার করছে শ্রম দফতর। তাদের দাবি, প্রতিটি ব্লকে শ্রমিকদের কাজের মানোন্নয়নে ‘উৎকর্ষ বাংলা’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলবে। প্রশিক্ষণের পরে শ্রমিক যাতে জেলায় কাজ পান সে জন্য ব্যবসায়ী সমিতি, শিল্প দফতরকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
পুরাতন মালদহের সেতু মোড়ে বুধবার দুপুরে শ্রমিক মেলা শুরু হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলাতে ১৮টি স্টল রয়েছে। শ্রম দফতরের দাবি, শ্রমিক মেলা থেকে জেলার ৬১৩ উপভোক্তাকে বিভিন্ন প্রকল্পে দুই কোটি ১৯ লক্ষ টাকা আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে, এক কোটি ৫৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের পেনশন, ভবিষ্যনিধি প্রকল্পেও সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। মালদহে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে প্রায় ১১ লক্ষ শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত। এ বারের দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে নতুন কর্মসাথী প্রকল্পে দুই লক্ষ ৭০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে।
রাজ্যের মাইগ্র্যান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম জানান, জেলায় কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের ঋণদান থেকে যাবতীয় সুবিধা রাজ্য সরকার করছে। জেলায় জেলায় কর্মসংস্থানেও জোর দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে না গিয়ে জেলাতেই কাজ করবেন।”
মাঝেমধ্যেই জেলা থেকে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃ্ত্যুর ঘটনা ঘটে। মিজ়োরামে নির্মীয়মাণ রেল সেতু নির্মাণের কাজে গিয়ে জেলার ২৩ পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ফলে, এ বারের শ্রমিক মেলায় সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি শ্রমিকদের জেলাতেই কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হচ্ছে, দাবি শ্রম দফতরের। শ্রম দফতরের যুগ্ম কমিশনার মালদহের তানিয়া দত্ত বলেন, “কর্মসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত হওয়ায় সুবিধা হবে। শ্রমিকেরা যাতে নিজের জেলাতেই কাজ পান, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।” পুরাতন মালদহের রমেশ সরকার বলেন, “বাড়ি ছেড়ে ভিন্ রাজ্যে কাজে যেতে কারও ভাল লাগে না। বাধ্য হয়ে ভিন্ রাজ্যে যেতে হচ্ছে।”