কাঁচালঙ্কার রসগোল্লা। নিজস্ব চিত্র
বাঙালির জামাইষষ্ঠী। পাতে একটু কচি পাঁঠার মাংস, ভাপা ইলিশ, ভেটকি পাতুড়ি, চিংড়ি মালাইকারি না হলে হয়। শেষ পাতে মিষ্টি না হলে চলবেই না। তাই কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার— সব জায়গায় বাজার জমে উঠেছে। বড় মাপের ইলিশের দাম কেজি প্ৰতি প্রায় দুই হাজার টাকা ছুঁয়েছে। ছোট ও মাঝারির দাম এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। পিছিয়ে নেই চিংড়ি, ভেটকিও। পাঁঠার মাংসের দামও বেড়েছে অনেকটা। ভাল পাঁঠার মাংস কেজি প্ৰতি ৮৫০ টাকা। কোচবিহারের মৎস্য ব্যবসায়ী রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘এ বার জামাইষষ্ঠীর বাজার খুব ভাল। ডায়মন্ডহারবার থেকে প্রচুর ইলিশ এসেছে। দাম একটু বেশি হলেও, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়।’’ দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, ‘‘জামাইষষ্ঠীর জন্য প্রতি বছরেই দাম একটু বেশি থাকে। এ বারও তা রয়েছে।’’ বুধবারই বাজারে গিয়েছিলেন মঞ্জু সাহা। বলেন, ‘‘করোনার জন্য গত দু’বছর সে ভাবে ষষ্ঠী হয়নি। এ বছর ষষ্ঠীতে জামাই-মেয়ে আসবে। ষষ্ঠীর আগে মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায়, সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’
কয়েক বছর পরে, ষষ্ঠীর দিন এ বার বাড়িতে আসবেন জামাই। যা নিশ্চিত হতেই বুধবার সকাল সকাল বাজারে গিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ার শহরের ছবি দাস। ৮৫০ টাকা কেজি দরে পাঁঠার মাংস কেনেন। কিন্তু বিকেল হতেই সে মাংসের দাম ৯০০ টাকায় পৌঁছে যায়। শুধু মাংসই নয়, জামাইষষ্ঠীর বাজারে মাছের দাম আকাশছোঁয়া আলিপুরদুয়ারেও। জেলার একাধিক বাজারে ইলিশের দাম কেজি প্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। চিতল মাছ কেজি প্রতি আটশো থেকে এক হাজার টাকা। আড় মাছ সাতশো থেকে আটশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিংড়ি মাছের দামও একাধিক বাজারে আটশো টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার নিউটাউন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বিনয় সরকার বলেন, “বুধবার সকাল থেকেই জামাইষষ্ঠীর বাজার কিছুটা জমতে শুরু করেছে। তবে যতটা আশা করেছিলাম, ততটা এখনও জমেনি। বৃহস্পতিবারও অনেকেই মাছ কিনবেন।”
জামাইষষ্ঠীতে এ বার চমক ঝাল রসগোল্লা। রসগোল্লায় চেনা মিষ্টির স্বাদে মিশবে কাঁচালঙ্কার ঝালও। তাতে রসগোল্লায় আসবে ঝাল-মিষ্টির আমেজ। বাজারের অন্য রসগোল্লার তুলনায় স্বাদের তফাৎ শুধু নয়, রঙেও থাকবে ফারাক। ঝাল রসগোল্লা হবে কাঁচা সবুজ লঙ্কা রঙের। জামাইষষ্ঠীর চমক ওই ঝাল রসগোল্লার রং, রেসিপি নিয়ে চর্চা চলছে কোচবিহারে। জামাইরা তা কতটা পছন্দ করবেন, রয়েছে নানা মত। কারও কথায়, ‘‘স্বাদের বৈচিত্র্যেই জামাইরা পছন্দ করবেন ঝাল রসগোল্লা।’’
কোচবিহারের বাণেশ্বরের মিষ্টি ব্যবসায়ী বিজয় ঘোষ বলেন, ‘‘ঝাল রসগোল্লা আসলে কাঁচালঙ্কা মিক্সচার মেশিনে পিষে ছানা, চিনির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি। যাঁরা খুব বেশি মিষ্টি পছন্দ করেন না বা একটু ভিন্ন স্বাদের রসগোল্লা খেতে চান, তাঁদের এটা পছন্দ হবেই।’’ বিক্রেতাদের একাংশ জানান, বাজারে এ বার আম রসগোল্লা, আম সন্দেশ, আম দই, আম কালাকাঁদ, কাশ্মিরী রসগোল্লার মতো রকমারি মিষ্টিও নজর কাড়ছে। কোচবিহার শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ী সঞ্জয় বণিক জানান, ছানা, কেশরের মতো কিছু উপকরণ কাশ্মিরী রসগোল্লায় থাকবে। বাবুরহাটের মিষ্টি ব্যবসায়ী গণেশ মোদক জানান, জামাইষষ্ঠীতে আম ও মিষ্টির স্বাদ এক সঙ্গে দিতেই আমের মিশ্রণের ৎমিষ্টি, দই করা। ভালই বিক্রি হচ্ছে। ফালাকাটা, ধূপগুডি়র কয়েকটি মিষ্টির দোকানে জামাইষষ্ঠীর জন্য তৈরি হচ্ছে ‘সুগার ফ্রি’ মিষ্টিও।