শিলিগুড়ি পুরনিগমের ভবন। নিজস্ব চিত্র
পুরভোটের ওয়ার্ড সংরক্ষণের খসড়া তালিকার জেরে ধাক্কা খেল জলপাইগুড়িতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল। সংরক্ষণের এই তালিকাই চূড়ান্ত থাকলে গতবারের জয়ী তৃণমূলের ১৫ কাউন্সিলরের মধ্যে এ বার নিজেদের জেতা ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াতে পারবেন না পাঁচ কাউন্সিলর। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূলের পাপিয়া পাল। রয়েছেন চেয়ারম্যান পরিষদের সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায়। তিনি জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতিও। সংরক্ষণের গেরোয়া পড়তে পারেন বামেদের দু’জন এবং কংগ্রেসের একজন কাউন্সিলর।
শুক্রবার জেলা প্রশাসন ওয়ার্ড সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত খসড়া তালিকা নিয়ে অভিযোগ বা আপত্তি জানানো যাবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। প্রশাসনের একটি অংশের দাবি, যথাযথ আইন এবং বিধি মেনেই তালিকা তৈরি হয়েছে।
এ দিনই খসড়া তালিকা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়। তিনি শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ২০১৫ সালের পুরভোটে আট নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় সৈকত ১১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে ভোটে লড়েন এবং বিপুল ভোটে জেতেন। তারপর থেকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে থেকে নিজস্ব পরিচিতিও তৈরি করেন সৈকত। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, এ বারও সৈকত ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াবেন ভেবে প্রচার শুরু করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খসড়া তালিকা বেরলে দেখা যায় ১১ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। পেশায় আইনজীবী সৈকতের কথায়, “আমরা যাঁরা আইন নিয়ে চর্চা করি, তাঁদের মনে হয়েছে এই তালিকা যথাযথ নিয়ম মেনে হয়নি। তাই আমরা আপত্তি জানাব।” খসড়ায় পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পাপিয়া পালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, অন্য কোনও ওয়ার্ডে পাপিয়াকে ভোটে লড়তে দেওয়া হতে পারে। এ দিন পাপিয়া বলেন, “আমার ওয়ার্ডে দলের যিনি প্রার্থী হবেন, তাঁর হয়েই প্রচার চালাব।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “কাউন্সিলরদের ডেকে বৈঠক করব। তাঁদের থেকে খসড়া তালিকা নিয়ে মতামত শুনব। যদি মনে হয় আপত্তি জানানোর, তাহলে দলের তরফ থেকে নিশ্চই আপত্তি জানানো হবে।”
খসড়া তালিকায় ধাক্কা খেয়েছে বামও। পুরসভায় ‘সরব’ বলে পরিচিত বাম কাউন্সিলর কাবেরি চক্রবর্তী এবং প্রদীপ দে, দু’জনেরই ওয়ার্ড তফসিলি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। কংগ্রেস কাউন্সিলর পরিমল মালোদাসের জেতা ২৫ নম্বর ওয়ার্ড এ বার মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে।
এই মূহুর্তে জলপাইগুড়ি পুরসভায় বিজেপির কোনও কাউন্সিলর নেই। তবে সূত্রের খবর, বিজেপি তথা সঙ্ঘ কয়েকজন বিশিষ্টকে পুরভোটে লড়ানোর কথা ভেবেছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জন যে ওয়ার্ডে থাকেন সেটি সংরক্ষণের আওতায় পড়েছে। খসড়া তালিকা চূড়ান্ত থাকলে তাঁদেরকে অন্য ওয়ার্ড থেকে লড়ানো হবে কিনা ভাবছে বিজেপি। জেলা বিজেপির সভাপতি বাপি গোস্বামীর মন্তব্য, “লোকসভা ভোটের নিরিখে আমরা জলপাইগুড়ির সব ওয়ার্ডেই এগিয়ে। সব ওয়ার্ডের বাসিন্দারাই চাইছে শহরে এ বার স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত পুরবোর্ড গঠন হোক।”