জোরকদমে: ঠিয়াপার্টি ও স্থানীয় দুষ্কৃতীদের ভয়ে পুলিশি প্রহরায় চলছে বাঁধ তৈরির কাজ। মালদহের ভুতনিতে। নিজস্ব চিত্র
বর্ষা দোরগোড়ায়। গঙ্গার জলও বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে মালদহের ভূতনির কেশরপুরে বোল্ডার ফেলে গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধের কাজ দ্রুত শেষ করতে চায় সেচ দফতর। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত ঠিয়াপার্টি ও স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর ভয়ে তটস্থ দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা। আতঙ্কে ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরাও।
এখন এমনই পরিস্থিতি যে, কাজ শেষ করতে কার্যত পুলিশি প্রহরায় দফতরের ইঞ্জিনিয়ার-কর্মীদের কাজের এলাকায় নিয়ে যেতে হচ্ছে। সশস্ত্র পুলিশের উপস্থিতিতে কাজ হচ্ছে দিনভর। কাজ শেষে কর্মীদের প্রহরা দিয়ে নিয়ে এসে পুলিশ মানিকচক ব্লকের শেষ সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে। মালদহের মানিকচকের ভূতনির এ নিয়ে প্রশাসনিক মহলে জোর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কি ওই দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করতে পারছে না। যদিও পুলিশের দাবি, দু’টি বোমাবাজির ঘটনায় ইতিমধ্যে ন’জন গ্রেফতার হয়েছে।
ভূতনির কেশরপুরে গঙ্গা ভাঙন ঠেকাতে ৪০০ মিটার এলাকায় বোল্ডার ফেলার কাজ করছে সেচ দফতরের মালদহ ডিভিশন। পাঁচ কোটি টাকার ওই কাজ গত মার্চের মাঝামাঝি শুরু হয়েছে। অভিযোগ, ভাঙন রোধের কাজে তোলা চেয়ে না পেয়ে ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত ঠিয়াপার্টি ও স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীদল ইতিমধ্যে দু’বার বোমাবাজিও করেছে। প্রথমবারের বোমাবাজিতে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার জখম হন। ১ জুন ওই কাজ পরিদর্শনে যাওয়া সেচ দফতরের গাড়িতে বোমাবাজি করা হয়। তাতে দফতরের দুই কর্মী-সহ ভাড়া করা গাড়ির চালক বোমাবাজিতে জখম হন। কিছুদিন আগে দফতরের এক কর্মী আলম শেখ মারা যান। অপরজন ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট চিরঞ্জীব মিশ্র এখনও কলকাতার একটি নার্সিংহোমে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। গাড়ির চালক প্রণয় ঘোষ মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন। জানা গিয়েছে, ১ জুনের বোমাবাজির ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন আতঙ্কে সেই ভাঙন প্রতিরোধের কাজ বন্ধ ছিল। জানা গিয়েছে, দফতরের কর্মীদের আতঙ্ক ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের মালদহ ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার প্রণব সামন্ত জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন। শেষপর্যন্ত পুলিশি প্রহরায় কাজ ফের শুরু হয়েছে এবং কাজ প্রায় শেষের পথে।
কিন্তু এখন কাজ কীভাবে হচ্ছে? পুলিশ সূত্রে খবর, ওই কেশরপুরে কাজের এলাকায় আটজন সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করে একটি ক্যাম্প করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মালদহ থেকে রোজ ওই কাজের তদারকি ও পরিদর্শনে দফতরের যে ইঞ্জিনিয়ার বা কর্মীরা যাচ্ছেন তাঁদের মথুরাপুরের শঙ্করটোলা ঘাট থেকেই পুলিশি প্রহরা দিয়ে কাজের এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেচ দফতরের একাংশ কর্মীর বক্তব্য, এভাবে কি কাজ করা যায়? দফতরের মালদহ ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার প্রণব সামন্ত বলেন, “আমরা জেলাপ্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলাম। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পদক্ষেপে আমরা কাজটি খুব দ্রুত শেষ করতে পারব।”