তিস্তা নদী।
তিস্তার নদীখাত থেকে পলি সরানোর প্রস্তাবের বিস্তারিত তথ্য জানানো হল রাজ্যের সেচ দফতরের সচিবকে। দফতরে প্রস্তাবের বিশদ রিপোর্টও জমা পড়েছে। সূত্রের খবর, এক লপ্তে না হলেও অতি বন্যাপ্রবণ এলাকা ধরে ছোট-ছোট অংশের পলি তোলার কাজে বরাদ্দ মঞ্জুর হতে পারে। তিস্তায় ‘ড্রেজ়িং’ করতে হলে কয়েকশো কোটি টাকা প্রয়োজন। প্রস্তাবে অন্তত ছ’শো কোটির বরাদ্দের উল্লেখ রয়েছে বলে খবর। এই অঙ্কের বরাদ্দ মিলবে কি না বা কোথা থেকে মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেন্দ্রের ব্রহ্মপুত্র বোর্ড রাজ্যের প্রকল্পে সাড়া দেয় না বলে অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে বরাদ্দে সমস্যা হলে, অতি বন্যাপ্রবণ এলাকা ধরে ছোট ছোট কাজ হতে পারে বলে খবর।
সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কাছে তিস্তায় ‘ড্রেজ়িং’-এর প্রস্তাব প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানিয়েছেন, পরে এ বিষয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বিস্তারিত জানাবেন। কালীপুজোর পরে জলপাইগুড়িতে আসতে পারেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী।
তিস্তা নদীখাতে ‘ড্রেজ়িং’ আদৌও সম্ভব কি না সে প্রশ্নও উঠেছে। এত বড় নদীর কোন অংশে ‘ড্রেজ়িং’ করা হবে, আর কোথায় হবে না তা ঠিক হবে কী করে সে প্রশ্নও তুলেছেন পরিবেশবিদেরা। বেশ কয়েক বছর ধরে জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তা নদীতে বৈধ বালি বা পাথর খাদানের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে তিস্তায় বালি বা পাথর তোলার অনুমতি দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সেচ দফতর সূত্রের খবর, তিস্তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ নেই। তবে জাতীয় পরিবেশ আদালত বছর কয়েক আগে নির্দেশ দিয়েছিল, পরিবেশের উপরে কী প্রভাব পড়তে পারে, সে সমীক্ষা (ইআইএ) না করে কোনও নদীখাত থেকে বালি-পাথর তোলা যাবে না। তিস্তায় সেই সমীক্ষা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সে কারণে বার বার জেলা প্রশাসন থেকে তিস্তায় বালি-পাথর তোলার প্রস্তাব কমিশনের কাছে পাঠানো হলেও, তাতে সম্মতি মেলেনি। সেচ দফতরের দাবি, বালি-পাথর নিয়মিত তোলা হলেও নদীখাতে পলি জমার প্রবণতা কম হত।
তিস্তায় ‘ড্রেজ়িং’ আদৌ সম্ভব কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তিনি তিস্তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মামলা করেছেন জাতীয় পরিবেশ আদালতে। পরিবেশবিদদের দাবি, সিকিমে ব্যাপক হারে ভূমিক্ষয় এবং তিস্তার জলের অপরিকল্পিত ব্যবহারই বিপদ ডেকে এনেছে। তিস্তায় সেবকের কাছে কাছে পাথর ভাঙার যন্ত্র বসানো এবং গজলডোবার প্রকল্প নিয়েও মামলাকারী সুভাষ দত্ত বলেন, “তিস্তার মতো এত বড় নদীতে ড্রেজ়িং সম্ভব কি? নদী বাঁচাতে দ্রুত উপরের অংশে, অর্থাৎ, পাহাড়ে ভূমিক্ষয় বন্ধ করতে হবে। জলবিদ্যুৎ-সহ অপরিকল্পিত প্রকল্পে রাশ টানতে হবে। না হলে নদীর যা পরিস্থিতি, আগামী বর্ষাতেই জলপাইগুড়ি শহর, শিলিগুড়ির একাংশ ভাসতে পারে।”