পরস্পরকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই পক্ষের অধ্যাপকদের জিজ্ঞাসাবাদ করল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কাউন্সিলের গড়ে দেওয়া দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি।
সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ ওই তদন্তকারী কমিটির দুই সদস্য তথা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী ও রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পৃথ্বীরাজ ঝাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেম্বারে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অধ্যাপক দেবাশিস বিশ্বাস ও অশোক দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ওই দিনের মারপিটের ঘটনায় অভিযুক্ত আরেক শিক্ষাকর্মী তপন নাগকে এদিন তদন্ত কমিটির কাছে হাজির হওয়ার নির্দেশ পাঠানো হলেও তিনি ছুটিতে থাকায় হাজির হতে পারেননি। তবে কমিটির নির্দেশে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫ জন অধ্যাপক ওই দিনের গোলমালের ঘটনার সাক্ষী হিসেবে হাজির ছিলেন। তাঁদের কয়েকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।
তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জনবাবু এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য তথা রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পৃথ্বীরাজবাবু বলেন, ‘‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কমিটির পক্ষে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি কমিটির তরফে দুপক্ষের কাছেই বেশ কিছু প্রশ্নের লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। কমিটি সেই জবাব হাতে পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর কয়েকজন অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অশোকবাবু কাছে তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি নেওয়ার জন্য দাবি জানান। সেই সময় অশোকবাবু নতুন করে আর কাউকে ভর্তি নেওয়া যাবে না বলে তাঁদের জানিয়ে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে যান বলে অভিযোগ। সেই সময় কয়েকজন অভিভাবক ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের কাছে সহযোগিতা চাইতে গেলে টিএমসিপি সমর্থকেরা ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় বলে দাবি। পাশাপাশি, টিএমসিপি সমর্থকেরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একাধিক বোমা ফাটিয়ে ও শূন্যে গুলি চালিয়ে অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের ছত্র ভঙ্গ করে দেয় বলে অভিযোগ।
ওই ঘটনার পর অশোকবাবু পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করে দাবি করেন, দেবাশিসবাবু ও তপনবাবু তাঁকে মারধর করেন। তপনবাবু ও দেবাশিসবাবুও অশোকবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের মারধরের অভিযোগ করেন। দুপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কাউন্সিল গত বছরের নভেম্বর মাসে বালুরঘাট কলেজের অধ্যাপক দেবজ্যোতি সরকার ও ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলীপ সরকারকে নিয়ে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে এরপর ইউনিভার্সিটি কাউন্সিল সেই কমিটি ভেঙে নতুন একটি তদন্তকারী কমিটি গঠন করে দেয়।
দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপাচার্য ও অশোকবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সেই কারণে, কমিটি পক্ষপাতমূলক তদন্ত করে অশোকবাবুর বিরুদ্ধে যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা শুরু করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ না করে বেআইনি ভাবে নিজেদের পছন্দের লোকেদের নিয়ে অবৈধ তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছি, তাই আমার কণ্ঠরোধ করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’’
অশোকবাবু বলেন, ‘‘যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি। কারও বিরুদ্ধে বাইরে কোনও মন্তব্য করে নিজের রুচিবোধ বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাই না।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনিল ভুঁইমালির দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন মেনেই সব কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা চলছে। আগের তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট পেশ না করায় আইন মেনেই সেই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গড়ে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পেশ করলে ইউনিভার্সিটি কাউন্সিল সেই রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’’
বস্তুত, গত কয়েকমাসে বারবারই শিরোনামে এসেছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। বারবারই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দু’পক্ষের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছে। এমনকী, গুলি চলার খবরও মিলেছে। তার উপরে, এ বার দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষকদের নাম জড়ানোয় ক্ষুব্ধ একাংশ অভিভাবকেরা। তাঁদের মতে, এমন ঘটনা জনমানসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির ক্ষতি করে।