দৃশ্যান্তর: মোর্চার দফতরে দলবদলের অনুষ্ঠানে অনীত থাপা। নিজস্ব চিত্র।
শাসক ও বিরোধী— দুই দলের টানাপড়েনের মধ্যে আশঙ্কা সত্যি করেই দার্জিলিং পুরসভার হামরো পার্টিতে আবার ভাঙন।
‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর প্রধান তথা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপার হাত থেকে পতাকা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে দল ছাড়লেন হামরো পার্টির পুরপ্রতিনিধি সুধা লামা৷ দার্জিলিং জজ বাজারে মোর্চা দফতরে দলবদলের অনুষ্ঠানটি হয়৷ ‘এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে’ দলবদল বলে শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দলত্যাগী সুধার দাবি। যদিও টাকা, পদ ও নানা প্রলোভনে দল বদল বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন হামরো পার্টির নেতারা৷ এ দিনের অনুষ্ঠান থেকে পাহাড়ে আরও দল বদল হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অনীত৷ পক্ষান্তরে, অজয় এডওয়ার্ড বলেছেন, ‘‘আমাদের টাকা নেই, ক্ষমতা নেই। সেখানেই দল ভাঙার খেলা চলছে। আমরা শুধু মানুষের পাশে থাকতে পারি।’’
দার্জিলিং পুরসভায় ক্ষমতাসীন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার ১৫ ও সহযোগী তৃণমূলের দু’জন সদস্য মিলিয়ে শাসক পক্ষে পুরপ্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৷ বিরোধীদের হাতে ১৪ জন পুরপ্রতিনিধি। তাঁদের মধ্যে হামরো পার্টির ১১ জন এবং বিমল গুরুংয়ের জনমুক্তি মোর্চার তিন পুরপ্রতিনিধি। গত বছর মার্চে দার্জিলিং পুরসভায় ভোটের পর ৩২টি আসনের মধ্যে হামরো পার্টি ১৮টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে। গত নভেম্বর থেকে এই নিয়ে দুই দফায় তাদের সাত জন পুরপ্রতিনিধি দল ছাড়লেন।
অনীত এ দিন বলেন, ‘‘আমরা গত ছয় বছরে পাহাড়ের নেতিবাচক রাজনীতি থেকে সরে এসে উন্নয়ন, শান্তির পক্ষে কাজ করছি। দার্জিলিঙে বিরোধী পুরপ্রতিনিধিরা অনেকেই নিজের ক্ষেত্রের আরও কাজ চান, তাই সুধা লামারা আমাদের সঙ্গে পথ চলতে এসেছেন। পুরসভা এবং জিটিএ মিলিয়ে আরও অনেকেই আগামী দিনে আসবেন।’’ তিনি জানান, পাহাড়ে দলত্যাগীদের নানা কথা বলা হয়। এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানো হয়। এতে সুধা লামার মতো পুরপ্রতিনিধিধিদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা তাঁদের নেতারা নিশ্চিত করবেন।
২০২১ সালের শেষে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির মতো পাহাড়ে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির জন্ম। কয়েক মাসের মধ্যে পুরসভায় ক্ষমতায় এসে সবাইকে চমকে দেয় হামরো পার্টি। পাহাড়ের উন্নয়ন, শৈলশহরের নানা পরিকল্পনা সামনে আনেন অজয়। কিন্তু তিনি নিজে পুরভোটে হারেন। দলের রীতেশ পোর্টেল পুরপ্রধান হলেও অজয়ই পুরসভা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ‘রিমোট কন্ট্রোল’-এর অভিযোগ তুলে বিষ্ণু মাল্লা, দীপেন ঠাকুরি বা গণেশ প্রধানের মতো পোড়খাওয়া পুরনো নেতারা দল ছাড়েন। যা নিয়ে হামরো পার্টির অভিযোগ, টাকা, সমতলে ফ্ল্যাট, গাড়ি, অফিস বা পদের লোভে দলবদল চলছে।
সম্প্রতি প্রজাতান্ত্রিক এক পুরপ্রতিনিধির সদস্যপদ বাতিল করার দাবি তোলে হামরো পার্টি। ওই সদস্যপদ খারিজ হলে দুই তরফে সদস্য সংখ্যা ১৫-১৫ হয়ে যেতে পারত। এ দিনই হামরো পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে দলের সহ সভাপতি রবার্ট ছেত্রী জানান, টাকা রোজগারের লোভে হামরো পার্টিতে কারও এসে লাভ নেই। কারণ, দল মানুষের কাজের জন্য থাকবে। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নয়।