টেটের জট: রদবদল, মুচলেকাও

নিয়োগপত্র নেওয়ার আগে কোনও জেলায় মুচলেকায় সই করতে হচ্ছে প্রার্থীদের। কোথাও আবার কাউন্সিলিংয়ের পরে নিয়োগপত্রই মিলছে না বলে অভিযোগ। টাকা লেনদেন-সহ একাধিক অনিয়ম আড়াল করতেই সফল আবেদনকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এই নিয়ে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই চলছে বিক্ষোভ। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। এ দিন দ্বিতীয় পর্বনিয়োগপত্র নেওয়ার আগে কোনও জেলায় মুচলেকায় সই করতে হচ্ছে প্রার্থীদের। কোথাও আবার কাউন্সিলিংয়ের পরে নিয়োগপত্রই মিলছে না বলে অভিযোগ। টাকা লেনদেন-সহ একাধিক অনিয়ম আড়াল করতেই সফল আবেদনকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এই নিয়ে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই চলছে বিক্ষোভ। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। এ দিন দ্বিতীয় পর্ব

Advertisement
শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৮
Share:

শিলিগুড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে বিক্ষোভ বাম সংগঠনের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মুচলেকা সই কেন

Advertisement

শিলিগুড়ি: নিয়োগপত্র নেওয়া সময় মুচলেকায় কেন সই করতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিলিগুড়িতে। নিয়োগপত্র নেওয়ার আগে মুচলেকায় প্রার্থীদের জানাতে হচ্ছে, বিচারাধীন জেনেও তাঁরা চাকরি করতে রাজি হয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার যদি আগে থেকেই আন্দাজ করে থাকেন যে পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ে আইনি জটিলতায় ভুগতে হবে, তবে আগে থেকে কেন পদক্ষেপ করা হল না?

যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতর ঘেরাও করে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই। নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলেই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। আগামী মঙ্গলবারও ঘেরাও আন্দোলন রয়েছে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস বলেন, ‘‘যত দিন পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে না, আন্দোলন চলবে।’’

Advertisement

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, টেট উত্তীর্ণদের মেধা তালিকা প্রকাশ না করে এসএমএস পাঠানোর ফলেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। শুধু বামপন্থীরাই নয়, তৃণমূলের একটি শিক্ষক সংগঠনও এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, যে সমস্ত স্কুলে দরকার, সেখানে শিক্ষক নিয়োগ ঠিক মতো হচ্ছে না। আবার অনেক স্কুলে পড়ুয়া কম, পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছে। সেখানে আরও শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে। শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) বিজয় লক্ষ্মীপাল। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই সব হচ্ছে। নিয়োগের আগে প্রার্থীদের তালিকাও দেখানো হচ্ছে।’’ তবে এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চাননি।

বিভাগ বদলে বিভ্রান্তি

জলপাইগুড়ি: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নতুন করে মামলা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাকরি প্রার্থীদেরই একাংশ এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন। আবার মামলা হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাকরি প্রার্থীদের কাছে একটু সময় চেয়েছেন জলপাইগুড়ির ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান ধর্তিমোহন রায়।

জলপাইগুড়ি জেলায় প্রাথমিকে নিয়োগের কাউন্সেলিংয়ের শুরু থেকেই গোলমাল শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে বেশ কিছু চাকরি প্রার্থীর বিভাগ বদল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁদের ক্ষোভ তাই এখন গিয়ে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাদের উপরে। এঁদেরই কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন, তা হলে কি জট খুলতে আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে?

সমস্যার সূত্রপাত হয় দিন কয়েক আগে৷ অভিযোগ, সাধারণ বিভাগের চাকরি প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও কাউন্সেলিং-এর পর অনেককে জানানো হয়, তারা অন্য বিভাগের প্রার্থী৷ যার জেরে তাদের নিয়োগপত্র আটকে যায়৷ এই প্রার্থীদের অভিযোগ, এর পরে তাঁরা টানা কয়েক দিন তদ্বির করেন। কিন্তু ডিপিএসসি কর্তাদের কাছ থেকে সদুত্তর পাননি বলে তাঁদের দাবি। নোটিস টাঙিয়ে ডিপিএসসি জানিয়ে দিয়েছে, চাকরি প্রার্থীরা যেন কলকাতায় পর্ষদের সচিবের সঙ্গে দেখা করে দেখা করেন৷

সেখানে গিয়েও যে সমাধান মিলছে, তা কিন্তু নয়৷ বিভাগ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া প্রার্থীদের অভিযোগ, পর্ষদ দফতরে যাওয়ার পর সেখানে তাঁদের নথি জমা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু সমস্যার কবে সমাধান হবে, কিংবা আদৌ হবে কি না, তার কোনও সদুত্তর মিলছে না৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাকরি প্রার্থীদের কেউ কেউ বলেন, এর পরে হয়তো আদালতেই যেতে হবে!

ধর্তিমোহনবাবু বলেন, ‘‘চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে প্যানেল তৈরি— সবটাই কলকাতা থেকে হয়েছে৷ তাই কারও বিভাগ বদলে গেলেও তাতে আমাদের কোনও হাত নেই৷ তা ছাড়া পর্ষদের নির্দেশেই ওই প্রার্থীদের সেখানে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘গোটা রাজ্যেই এই সমস্যা রয়েছে বলে শুনেছি৷ তাই চাকরি প্রার্থীদের উচিত পর্ষদকে একটু সময় দেওয়া৷’’

কেন প্যারাটিচার

কোচবিহার: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় সফল পরীক্ষার্থীদের একাংশের নাম প্যারাটিচারের কোটায় নথিভুক্ত হয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে কোচবিহারে। ওই সফল পরীক্ষার্থীদের একটি দল শুক্রবার কলকাতায় গিয়ে সল্টলেকে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান। তাঁদের দাবি, তাঁরা সাধারণ পরীক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। সফল হওয়ার পরে নিয়োগপত্র দেওয়ার সময় তাঁদের প্যারাটিচারের কাগজপত্র দেখাতে বলেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। গত বুধবার তা নিয়ে সংসদের অফিসেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ওঁরা। বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলাশাসকের দফতরে একটি অভিযোগও জমা দেন তাঁরা।

এই চাকরি প্রার্থীদের এখনও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। সফল এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক রাজা বৈদ্য বলেন, “সংসদের কথা মেনেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতায় এসেছি। কবে কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।” পরীক্ষার্থীদের তরফে হীরেন বর্মন বলেন, “প্যারাটিচার হিসেবে অন্তত পঞ্চাশ জনের নাম এসেছে। অথচ ওই কোটায় আমরা কেউ আবেদন করিনি। পুরো বিষয়টি সংসদ কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে।” বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement