বাড়িতে মিষ্টিমুখ। ছবি: বিনোদ দাস।
বিমানবন্দর থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বিজ্ঞাপন তো রয়েছেই। হাকিমপাড়ায় তাঁদের তিন তলা বাড়ির উপর থেকে ঝুলছে তাঁর ছবি-সম্বলিত ঢাউস ব্যানার, তাঁকে স্বাগত জানিয়ে। তিনি সদ্য এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী মহিলা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য রিচা ঘোষ। একই সঙ্গে আজ, বৃহস্পতিবার রিচার জন্মদিন। এই দুই জোড়া উপলক্ষ শিলিগুড়ির পরিবেশ বদলে দিয়েছে।
বুধবার বেলা ১২টা গড়াতেই রিচার বাড়ির সামনে ভিড় স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মৌসুমি হাজরা, শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের লোকজন আর পরিচিতদের। ফুল নিয়ে অপেক্ষমাণ সবাই। এসেছে ব্যান্ডপার্টিও। বেলা ১টা নাগাদ রিচা পৌঁছতেই ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে, পুষ্পবৃষ্টি করে মা স্বপ্না ঘোষা বরণ করে মিষ্টি মুখ করালেন। এর পরে ঘরে ঢুকলেন মেয়ে। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এ দিন শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং গিয়েছেন। দুপুরে তিনি শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারের ফোনের মাধ্যমে রিচার সঙ্গে কথা বলেন, শুভেচ্ছা জানান। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার পরে সেখান থেকে রিচাকে আনার জন্য পরিবারের লোকদের সঙ্গে খাদা, ফুল, মালা নিয়ে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া পরিষদের সচিব মনোজ বর্মা ও অন্যরাও। বাগডোগরার একটি ক্লাবের সদস্যেরা বিমানবন্দরেই তাঁকে সংবর্ধনা জানান।
শহরে ঢোকার পরে নানা উদ্যাপন। কলেজপাড়ায় নিজের ক্লাব বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবে যান রিচা। তাঁর সম্মানে শিলিগুড়ির মেয়র এবং পরিবারের উদ্যোগে ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয় সেবক রোডের দু’মাইলে একটি ইন্ডোর মাঠে।
অনূর্ধ-১৯ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে মহিলা ক্রিকেট দলের জয়ের পরে এশিয়ান গেমসে তাঁদের সাফল্যও ইতিহাস গড়েছে। রিচা এ দিন বলেন, ‘‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ যখন জিতেছিলাম, ভাল লেগেছিল। এশিয়ান গেমস জিতেও দারুণ খুশি হয়েছি। ড্রেসিং রুম উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে। দু’টোর মধ্যে তুলনা করা যায় না। যেটা জিতব, সেটাই আমাদের জন্য বিশেষ। জয়ের পরে মুম্বইয়ে ফিরতেই সংবর্ধনায় ভেসে গিয়েছি। বিমানবন্দরে এসেছিলেন সবাই।’’ প্রথম বার এশিয়ান গেমস আর তাতেই জয়? রিচা বলেন, ‘‘পরিশ্রম করার দিকে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছিলাম। তাই সাফল্য এসেছে। এটা ধরে রাখতে হবে।’’ রিচাদের পরবর্তী লক্ষ্য বিশ্বকাপ। মাঝে কিছু দিন দল থেকে বাদ যাওয়াটাও তাঁর জীবনের একটা অভিজ্ঞতা বলেই মনে করেন রিচা। তাঁর কথায়, ‘‘এগুলো অনেক সময় সাহায্য করে আরও উন্নতির পথে।’’ এ দিন মেয়র একাদশের সঙ্গে খেলাও উপভোগ করেন রিচা। সেখানে সপরিবার ঘণ্টাচারেক কাটান রিচা। মেয়র গৌতম দেব, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার ছাড়াও রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ ছিলেন মেয়র একাদশের জার্সি পরে। বিপক্ষে ছিল রিচার দল। রিচা উইকেট কিপিং, ব্যাটিং, বোলিং করেছেন। এ দিন বাবাকেও আউটও করেন রিচা। ম্যাচ জিতেছে রিচার দলই। আজ রিচার জন্মদিনে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের হলঘরে রয়েছে পরিবারের তরফে অনুষ্ঠানের আয়োজন। কী কী ব্যবস্থা থাকছে? হাসিমুখে রিচার জবাব, ‘‘সব মা-বাবা জানেন। আমি তো সবে বাড়ি এলাম। অনেক দিন পর!’’