প্রতীকী ছবি।
ধূপগুড়ির এক আদিবাসী মহিলাকে গণধর্ষণ ও অত্যাচারের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বছর দুয়েক আগে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তিন দিনের মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করে এবং পুরো তদন্ত গুটিয়ে এনে চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন ধূপগুড়ি থানার আইসি সুবীর কর্মকার । দুবছর পরে সেই তদন্তের জন্যই কেন্দ্রীয় সরকারের পুরস্কার পেলেন সেই আইসি। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে আদিবাসী বধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্য পুলিশের ইনস্পেক্টর সুবীরবাবু তখন মাস তিনেক ধূপগুড়ি থানার দায়িত্ব নিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশ জোড়া সব রাজ্যের পুলিশ অফিসারদের তদন্তের মূল্যায়ণে ধূপগুড়ির গণধর্ষণের মামলার তদন্ত অন্যতম সেরা বলে মনে করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ধূপগুড়ি থানার আইসি যে পুরস্কারটি পেয়েছেন তার নাম হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুরস্কার-২০২০।
মন্ত্রকের এই স্বীকৃতির কথা রাজ্য পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে ঘোষণা হয়েছে। রাজ্য পুলিশই সুবীরবাবুর নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছিল ওই মন্ত্রকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্য পুলিশের পেজে ধূপগুড়ির আইসির স্বীকৃতির কথা জানানোও হয়েছে। ২০১৮ সালে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার মাস তিনেক আগে সুবীরবাবু পুরুলিয়ার মানবাজারের সার্কেল ইনস্পেক্টর পদ থেকে বদলি হয়ে ধূপগুড়ির আইসি হয়েছিলেন। তার চার বছর আগে ২০১৪ সালে ধূপগুড়িতেই সালিশি সভায় এক নাবালিকাকে হুমকি দেওয়া এবং মাতব্বরদের ফতোয়া না মানায় গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সে অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্য তো বটেই, দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। সেই মামলার তদন্ত নিয়ে একাধিক অরাজনৈতিক এবং মানবাধিকার সংগঠন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তা নিয়ে আন্দোলনও হয়েছিল। তারপরে বিভিন্ন সময়ে ধূপগুড়িতে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। তার পরপরই ধূপগুড়ি থানা পর্যায়ে পুলিশে পরপর বেশ কিছু রদবদলও হয়েছিল। জেলা পুলিশের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই স্বীকৃতিতে পুলিশের মনোবল বাড়বে।
জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, "এই ধরনের পুরস্কারে কাজে উৎসাহ বাড়ে। ভাল কাজ করেছেন এই কারণে তিনি পুরস্কার পাচ্ছেন। এতে সকল পুলিশের কাজ ভাল কাজ করার আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছি।"
পুলিশ অফিসারদের কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সারা দেশ থেকে বাছাই করা ১২১ জন অফিসারকে তদন্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রক এ বছর পুরস্কার দিয়েছে বলে খবর। রাজ্য সহ উত্তরবঙ্গ থেকে ১৩ জন পুলিশ অফিসারের নাম এবং তদন্তে সাফল্যের উদাহরণ রাজ্য পুলিশের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছিল। তার থেকেই বাছাই করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। উত্তরবঙ্গ থেকে একমাত্র ধূপগুড়ি থানার আইসি পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন। আইসি সুবীর কর্মকার বলেন, “সহকর্মীরা সকলে সাধ্যমতো সাহায্য করেছে বলেই তদন্ত দ্রুত শেষ হয়েছিল। পুলিশের কাজ পুরোপুরি দলগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। ঊর্ধতন অফিসারেরাও আস্থা রেখেছেন। তাই এই পুরস্কার আমাদের সকলের।"