শুক্রবার মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের সঙ্গেই খেয়েছিলেন শ্যামল টিগ্গা। নিজস্ব চিত্র
মিড-ডে মিল পেতে শনিবারও স্কুলে হাজির হলেন তপন ব্লকের হরসুরার সিরাহালের বাসিন্দা শ্যামল টিগ্গা। তবে এ দিন তাঁকে মিড-ডে মিল খেতে হয়নি। স্কুলের পাশের এক বাসিন্দাই তাঁকে খাবার দেন। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু অভিযোগ, ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কাটলেও খোঁজ নেয়নি প্রশাসন।
তপনের বিডিও ছোগেল তামাং বলেন, ‘‘১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে আপাতত ওঁকে মিড-ডে মিল খেতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’’
কিন্তু প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, স্কুলের মিড-ডে মিলে শুধুমাত্র পড়ুয়াদের জন্যই খাবার বরাদ্দ থাকে। নিয়মিত বাইরের কাউকে মিড-ডে মিল খেতে দেওয়া হলে সরকারি নিয়ম ভাঙায় অভিযুক্ত হতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তাতে সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
শ্যামলের অভিযোগ, তিনি কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাননি। পাননি আবাস যোজনার ঘর, ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজের সুযোগ। দশ কাঠা জমি ‘বন্ধক’ রেখে কোনওমতে এত দিন চলেছেন। কয়েক মাস ধরে অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। কয়েক দিন না খেয়ে থাকায় খাবারের খোঁজে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্কুলের মিড-ডে মিল রান্নার ঘরের সামনে বসে থাকছেন।
শ্যামলের এই অবস্থা দেখে স্কুলশিক্ষকরা সরকারি নিয়ম ‘ভেঙেই’ তাঁকে খেতে দিয়েছেন। সেই থেকে প্রতি দিনই খাবারের আশায় স্কুল খোলার আগেই রান্নাঘরের সামনে বসে থেকেছেন তিনি।
শ্যামলের কথায়, ‘‘লেখাপড়া জানি না। তাই সরকারি সুবিধা কী ভাবে মিলবে বুঝিনি। আগেও কোনও কাজ পাইনি। এখন তো চোখেও দেখতে পাই না। খুব কষ্টে রয়েছি। স্কুলের মাস্টাররা খেতে দিচ্ছেন বলে বেঁচে গেলাম।’’
তপন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজু দাস ও তপন থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের সদস্য আমজাদ আলি মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির কেউ নেই। তাই তাঁকে চাল দেওয়া হলে রান্না করতে পারবেন না। তাই আপাতত মিড-ডে মিল বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করার কথা ভাবছি। তবে স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা করতে সোমবার ওঁর বাড়িতে গিয়ে কথা বলব। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার খিদের জ্বালায় হাঁটতে হাঁটতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মহাদেববাটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছন বছর বাহান্নের শ্যামল। দু’চোখে দৃষ্টিশক্তি প্রায় নেই। অভিযোগ, স্ত্রী, মেয়েরা তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও নিয়ে যাওয়ারও কেউ ছিলেন না। কর্মহীন, অক্ষম অবস্থায় ঘরে পড়ে থাকায় প্রতি দিন খাবারও জোটেনি।