শিলিগুড়িতে বাজির কারখানা। নিজস্ব চিত্র।
দুপুরে ভিড়ে ভরা জলপাইগুড়ির বাজির বাজার। একটি তুবড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে ক্রেতা জানতে চাইলেন, ‘‘এই বাজির অনুমোদন আছে তো?’’ বিক্রেতার উত্তর— ‘‘স্ক্যান করে দেখে নিন।’’ পাশের এক ক্রেতা বললেন, ‘‘প্যাকেটের গায়ে বার কোড আছে। স্ক্যান করলে বোঝা যাবে, সবুজ বাজি কি না।’’ এর পরে ক্রেতা কথা না বাড়িয়ে বাজি কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেন। প্রশ্ন হল— কোনটা অনুমোদিত বাজি, তা চেনার ভার কি শুধু ক্রেতার উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে?
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বহু দোকানেই এক ছবি। বহু ক্রেতা ‘স্ক্যান’ করার কথা ভাবছেনও না। অভিযোগ, বহু বিক্রেতা সবুজ বাজির নামে বিক্রি করে দিচ্ছেন নিষিদ্ধ বাজিই।
জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের দাবি, সরকারি নির্দেশ মেনে একমাত্র সবুজ বাজি পোড়াতেই বাসিন্দাদের সচেতন করা হয়েছে। তবে কোনটা খাঁটি সবুজ বাজি আর কোনটা নয়, তা যাচাইয়ের পরিকাঠামো জেলা স্তরে নেই বলে দাবি। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ কয়েক দফায় রাজগঞ্জ এবং কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে। সে প্যাকেটের গায়ে সবুজ বাজির ছাপ মারা থাকলেও প্যাকেটের ভিতরে কী আছে, তা বোঝার উপায় নেই।
শিলিগুড়ির বাজি ব্যবসায়ী সুদীপ্ত ভৌমিক বলেন, ‘‘ক্রেতারা চাইলেই কিউআর কোড স্ক্যান করতে পারেন। তবে কেউ নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করলে তা প্রশাসনের দেখা উচিত।’’ কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। জলপাইগুড়ির এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘কিছু অসাধু বিক্রেতা ইচ্ছেমতো প্যাকেটে সবুজ বাজির ছাপ মেরে নিয়েছে। তবে বারকোড স্ক্যান করলেই সবুজ বাজি কি না, বোঝা যাবে।’’ যদিও পুলিশেরই একাংশের প্রশ্ন, ক’জন ক্রেতা ‘বারকোড স্ক্যান’ করতে পারেন? তা ছাড়া, যাঁদের স্মার্টফোন নেই অথবা মোবাইলে ‘স্ক্যান’ করার সুযোগ নেই, তাঁরা কী করবেন?
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বলেন, ‘‘গত বারও সবুজ বাজি পোড়ানোর নির্দেশিকা ছিল। এ বারও নির্দেশিকা মেনে চলতে বলা হয়েছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, শহরে-গ্রামে নজরদারি চলছে।
পরিবেশকর্মী রাজা রাউতের কথায়, ‘‘বারকোড স্ক্যান করার মতো জটিল বিষয় ক্রেতাদের হাতে না ছেড়ে, সরকারেরই উচিত ছিল, পরিকাঠামো তৈরি করা।’’