ফাঁকা ক্লাস নিজস্ব চিত্র
প্রাক্ বর্ষায় প্রবল বৃষ্টিতে ভেসেছিল উত্তরবঙ্গ। তখন গরমে হাঁসফাঁস করছিল দক্ষিণবঙ্গ। সেই ছবি বদলে গেল আষাঢ়ের শেষে। এখন তীব্র দাবদাহে পুড়ছে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার। গত ১২ দিন ধরে একনাগাড়ে এমনই আবহাওয়া উত্তরবঙ্গের কমবেশি সব জেলায়। তাপমাত্রা ৩৪-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও অনুভূত হচ্ছে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। যার জেরে শিলিগুড়ির বেশ কয়েক জন স্কুল পড়ুয়াদের অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ক্লাসরুমের পরিবর্তে খোলা আকাশের নীচে গাছের তলায় ক্লাস চলার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের কাছে একটি স্কুল থেকে। এই পরিস্থিতিতে গরমের ছুটির দাবি করতে শুরু করেছেন অভিভাবকদের একাংশ। তবে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, সোমবার থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরবঙ্গে।
গরমের কারণে শিলিগুড়ির বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার অনেকটাই কমেছে। কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্লাসে এখন মেরেকেটে চার-পাঁচ জন। শিলিগুড়ি গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ওথুয়া বাগচী বলছেন, ‘‘শুক্রবার স্কুলে যে ক’জন পড়ুয়া এসেছিল, শনিবার তার চেয়ে অনেক কম। বেশ কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে গত এক-দু’দিনে। কারও বমি বা মাথাব্যথা।’’
শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দেবর্ষি আচার্য বলে, ‘‘এখন ছুটি দিলে ভাল হয়। আমাদের ক্লাসে মাত্র দু’টি ফ্যান। হাওয়া ঠিক মতো পাওয়া যায় না। শুক্রবার দু’জনের বমি হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্কুল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক জনকে।’’ একই ছবি জলপাইগুড়ির বিভিন্ন স্কুলে। শহরবাসীর দাবি, গত পাঁচ বছরে এত গরম দেখা যায়নি উত্তরবঙ্গে।
চলতি বছর যে সময় গরমের ছুটি পড়েছিল স্কুলগুলিতে, তখন প্রবল বর্ষা উত্তরবঙ্গে। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। এখন অভিভাবকদের একাংশের গরমের ছুটি চাইছেন। ছেলেকে নিয়ে শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলে আসা এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘গরমের ছুটিটা এখন দিলেই ভাল হত। বাচ্চারাও তো স্কুলে আসতে চাইছে না। এই গরমে ক্লাস করা যায় নাকি! অন্তত কিছু দিনের জন্য ছুটি দেওয়া হোক।’’
অভিভাবকেরা ছুটির দাবি তোলায় উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে সকালে পঠনপাঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সোমবার থেকে পাঁচ দিন স্কুল খুলবে সকালে। তার পরেও গরম না কমলে এই সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ওড়িশা উপকূলের দিকে মৌসুমি অক্ষরেখা সরে গিয়েছে। তাই জলীয় বাষ্প উত্তরবঙ্গে আসতে পারছে না। ফলে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে না এবং তাপমাত্রা বাড়ছে। তবে মৌসুমি অক্ষরেখা আবার নিজের জায়গায় ফিরতে শুরু করেছে। তাতে দিন দুয়েকের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হবে। ১৯ জুলাই থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু এই গরমের তীব্র গরমের মধ্যে নিয়মিত জল খাওয়া, বাড়ি থেকে কম বেরোনোর মতো কিছু পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, এই বিষয়গুলি মাথায় রাখলে নাক দিয়ে রক্তপাতের মতো ঘটনা কম ঘটবে। ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কাও কমবে।