বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি জিটিএর চিফ এক্সিকিউটিভ অনিত থাপা। — নিজস্ব চিত্র।
পাহাড় নিয়ে হওয়া ত্রিপাক্ষিক চুক্তি থেকে শুক্রবার সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। গোর্খা টেরিটোরিয়্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) তৈরিতে কেন্দ্র-রাজ্য ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন থাকা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল। তবে তাতে কিছুই যায় আসে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন জিটিএ-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার অনিত থাপা।
শনিবার শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলেজে জিটিএ-র অন্য সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন অনিত। বৈঠক সেরে তিনি বলেন, ‘‘ওরা ত্রিপাক্ষিক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করায় পাহাড়বাসীর মধ্যে অন্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সে কারণেই আমি জানাচ্ছি, এতে জিটিএতে কোনও প্রভাব পড়বে না। ঘটনাচক্রে, তাঁরা সেই সময় ক্ষমতায় ছিলেন, কাজেই তাঁদের সঙ্গেই কেন্দ্র ও রাজ্যের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষর হয়েছে। যা আইনে পরিণত হয়ে একটা প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি হয়েছে। তাই জিটিএ তার নিয়মেই চলবে।’’
গোর্খাল্যান্ড নিয়ে অনিত বলেন, ‘‘গোর্খাল্যান্ড পাহাড়বাসীর কাছে আবেগ। আমি নিজে গোর্খা হিসাবে গোর্খাল্যান্ড চাইলেও সেটা সম্পূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়। তা আমাদের মতো ছোট দলের রাজনীতির বিষয় না। এ ভাবে গোর্খাল্যান্ড চাইলেই পাওয়া যায়! পাহাড়ের রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়টি আলাদা। আমার কাছে সমাধান মানে পাহাড়ে কর্মসংস্থান, পাহাড়ের প্রতিটি বাড়িতে জল, রাস্তাঘাট, আলো পৌঁছে দেওয়া। মোট কথা, পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়নই পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান।’’
রাজ্যের সঙ্গে পাহাড়ের সম্পর্ক নিয়েও এ দিন নিজের মত প্রকাশ করেন অনিত। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলে আমার দল কাজ করছে। সেটা সবার সামনে বলতে আমার কোনও অসুবিধে নেই। রাজ্যের সঙ্গে বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে কাজ করার ফলেই পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় এসেছে। পর্যটনকে আবার চাঙ্গা করে তোলা গিয়েছে। হোম স্টের সংখ্যা বেড়েছে। গাড়িচালক থেকে অন্যান্যদের আয় বেড়েছে। আস্তে আস্তে আরও অনেক কিছু আসছে।’’
একটা সময় গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে বিমল, রোশনদের সঙ্গে গলা মেলাতে দেখা যেত অনিতকেও। সেই অনিতের গলায় কেন অন্য সুর? তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন জিটিএ প্রধান। অনিত বলেন, ‘‘সেই সময় অন্যান্যদের মতো আমিও দলের ক্যাডার ছিলাম। যে কারণে আমাকে জেলও খাটতে হয়েছে। কিন্তু ভেবে দেখলাম, আমরাই আমাদের নাম বদনাম করছি। এ ভাবে গোর্খাল্যান্ড পাওয়া যাবে না। কলকাতা বা দিল্লি থেকে মানুষ এসে পাহাড়ে আগুন জ্বালাননি। আমরাই জ্বালিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। সেই জন্যই সেই পন্থা থেকে সরে এসে নতুন ভাবে পাহাড়ের উন্নয়নের কাজে নেমেছি।’’
এ বিষয়ে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘আমাদের যা বলার তা আগেই বলে দিয়েছি। আমরা তো পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সে কোনও সমস্যা তৈরি করব না। দিল্লিকেন্দ্রিক আন্দোলন হবে। আমরা নির্বাচনে লড়াই করিনি। তরাই, ডুয়ার্সকেও জিটিএর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমাদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীকেও লিখিত আকারে জানিয়েছিলাম। তাতে কোনও আমল দেওয়া হয়নি।’’