মুখোমুখি: শিলিগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে অশোক ভট্টাচার্য ও গৌতম দেব। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখে বের হচ্ছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢুকছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার দীনবন্ধু মঞ্চে সেই সূত্রেই দুই জনের মুখোমুখি দেখা হল। সৌজন্য বিনিময় এবং কথাও হল। মেয়র বলেন, তিনি সম্প্রতি কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। শিলিগুড়ি শহরের জন্য অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস পেয়েছেন। ৩ জুলাই কলকাতায় যাচ্ছেন। পর্যটনমন্ত্রী জানান, তিনিও ওই সময় কলকাতাতেই থাকবেন। ২ জুলাই বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে তাঁর বক্তব্য রয়েছে। মেয়র তথা শিলিগুড়ি বিধায়ক বিধানসভায় তার সেই বক্তব্য যেন শোনেন। মেয়র জানান, তিনি ওই দিন যেতে পারলে নিশ্চয় থাকবেন।
এর আগে মেয়র হওয়ার পরে উত্তরকন্যায় গৌতম দেবের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী থাকায় তার দফতরে বসেই সে সময় কথা হয়। শিলিগুড়ির জন্য সাহায্যের আশ্বাস পেলেও বাস্তবে তা পাননি বলে নানা সময়ে অভিযোগ তুলেছেন মেয়র।
বাজেটের মুখে এ দিন পর্যটনমন্ত্রী জানান, শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের জন্য কেন্দ্রের কাছে বিশেষ প্যাকেজ দাবি করবে রাজ্য। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন। শিলিগুড়িকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসাবে ঘোষণার আর্জিও জানাবেন তাঁরা। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও দয়ার ব্যাপার নেই। কলকাতার পর শিলিগুড়িই একমাত্র জায়গা, যেখান থেকে সব চেয়ে বেশি কর আদায় করে কেন্দ্র। তার একাংশ শিলিগুড়ির উন্নয়নে কেন দেওয়া হবে না? শিলিগুড়ির জন্য কেন্দ্রের কাছে আলাদা প্যাকেজের দাবির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।’’ পর্যটনমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘উত্তরবঙ্গ অবহেলিত। বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। অথচ কেন্দ্র সরকার এর উন্নয়নে সহযোগিতা করছে না। তাই এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নামব।’’ বিজেপির উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক রথীন্দ্র বসু বলেন, ‘‘রায়গঞ্জে এমস হতে জমি দেয়নি রাজ্য। গজলডোবায় জমির দালালি ছাড়া কিছু হয়নি। উত্তরকন্যা ভবনটি তৈরি করা ছাড়া সেখানে কোনও কাজ হয় না। বাগডোগরা বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য জমি এখনও দেয়নি রাজ্য। রাজ্যের ভূমিকা তাঁরা ঠিক মতো পালন করছেন না কেন?’’
অভিযোগ, দার্জিলিং যাতায়াতের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। চিন নাথুলা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ গড়ে তুলছে। পাকিয়ং এয়ারপোর্ট করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিমানের জ্বালানিতে ছাড় দেওয়াতে যাত্রী পরিষেবা বেড়েছে। কিন্তু সড়ক না থাকলে মানুষ বিমানে নেমে যাবেন কোথায়? দার্জিলিং মোড় থেকে শালুগাড়া পর্যন্ত রাস্তা ৬ লেন করার প্রকল্প অবিলম্বে অনুমোদনের দাবি তুলেছেন পর্যটনমন্ত্রী।
তা ছাড়া পর্যটনমন্ত্রী এ দিন যে সব বিষয়ে কেন্দ্রের সহযোগিতা চেয়েছেন সেগুলো হল, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনকে গতিময় করা, বাগডোগরা বিমান বন্দরের নাম মনীষীর নামে রাখা, বাগডোগরা-শিলিগুড়ি কথাটি রেখে। শিলিগুড়িতে রেলে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা জমি বিনা মূল্যে রাজ্যের হাতে দেওয়া। রেলের জমিতে ১৫৩টি বস্তি রয়েছে। রাজ্যে সেখানকার বাসিন্দাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করবে। দার্জিলিঙে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শিলিগুড়িতে ভূগর্ভস্থ নিকাশি, মাটির নীচ দিয়ে কেবল পাতা, নদী দূষণ, যানজট, দূষণ মুক্ত করতে কেন্দ্রের সহযোগিতা চান। পাহাড়ে রোড নেট ওয়ার্ক, ধস প্রবণ জায়গা ঠিক করা, নদী দূষণরোধ, নদী-বনাঞ্চল রক্ষায় কেন্দ্রের ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ। পর্যটনে কেন্দ্রের ‘ইনসেনটিভ’ দিক। তিনি অভিযোগ করেন, দার্জিলিঙে বিজেপির সাংসদ ১৫ বছর রয়েছেন। তাঁরা কিছু করেননি। ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সেচ মন্ত্রী এবং মুখ্য সচিবরা থাকেন। অথচ উত্তরবঙ্গের তথা এ রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। অভিযোগ, বিজেপি সরকার রয়েছে বলে অসমের ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। বাংলা বঞ্চিত।