শিলিগুড়ি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়াডের কন্টেনমেন্ট জ়োনে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
করোনা আক্রান্ত ফল বিক্রেতার ১০ বছরের ছেলের শরীরেও এ বারে সংক্রমণ ধরা পড়ল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ওই ফল বিক্রেতার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁর পরিবারের পাঁচ জনকে এবং যে এলাকায় থাকেন সেখানকার অন্তত ২৫ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়। তাঁদের সকলের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ দিন সেই পরীক্ষার রিপোর্টে ওই বালকের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাকে মাটিগাড়ার কোভিড হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে শিলিগুড়িতে নতুন করে সংক্রমণের খোঁজ মেলায় কনটেনমেন্ট জ়োন নতুন করে চিহ্নিত করতে হবে কিনা, তা নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। সোমবার শিলিগুড়ির ৬ এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই দুই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরেই যে এলাকায় তাঁরা থাকেন সেখানকার রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এদিন দুই এলাকায় জীবাণুমুক্ত করার কাজ হয়। মহকুমাশাসক সুমন্ত সহায় জানান, একজন করে ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ায় কনটেনমেন্ট জ়োন করা হয়নি। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তবে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আক্রান্ত ব্যক্তি যে তথ্য দিয়েছেন, তা বিভ্রান্তিকর। অভিযোগ, আক্রান্তকে কোভিড হাসপাতালে নেওয়ার সময় ক্ষোভে ওই ব্যক্তি গেঞ্জি খুলে রাস্তায় ফেলে দেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে এলাকায় বাসিন্দারা আতঙ্কে ছিলেন। এ দিন পুরসভার কর্মীরা গিয়ে তা পুড়িয়ে দেয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে অভিযোগ। তা বিস্তারিত খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। কাউন্সিলর প্রশান্ত চক্রবর্তী জানান, তিনি ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে কোনও ভাবেই যাননি। ওই ব্যক্তি ফেরার পর ফোনে তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কথা জানান। চেম্বারে চিকিৎসক দেখিয়ে তিনি ১২ মে হোয়াটসঅ্যাপে ডাক্তারের রিপোর্ট দিয়ে কাউন্সিলরকে জানান তাঁর কোমরে ব্যথা। তবে যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেখানকার বাসিন্দারা সন্তুষ্ট না হয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। তাঁর সংস্পর্শে আসা ৩ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় শহরের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন পুরবোর্ড বৈঠক করে। পরে চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আক্রান্ত ফল বিক্রেতার শরীরে করোনা সংক্রমণ কোথা থেকে এল, তা স্পষ্ট নয়। তবে শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে তিনি যেতেন। সেখান থেকে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ওই বাজার জীবাণুমুক্ত করা হবে। বাজার কর্তৃপক্ষও সে ব্যাপারে কাজ করবেন বলেছেন।’’
৬ নম্বর ওয়ার্ডের যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি, তা বস্তি এলাকা। অশোক জানান, পুর কমিশনারকে বলা হয়েছে। তিনি জেলাশাসক, স্বাস্থ্য দফতর, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে দু’দিনের মধ্যে বস্তিগুলিতে করোনা মোকাবিলায় কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। ৬ এবং লাগোয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ড ঘিঞ্জি এলাকা। আক্রান্তদের বাড়ি যে এলাকায়, শুধু সেখানে একটি রাস্তা ব্যারিকেড করলে চলবে না। আরও কিছুটা বাড়তি এলাকা জুড়ে সেই কাজ করতে হবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া পুরো ওয়ার্ড কনটেনমেন্ট জ়োন করার পক্ষে নন তারা। আক্রান্তদের এলাকাগুলিতে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা এবং যতটা বেশি সম্ভব নমুনা পরীক্ষায় জোর দিতে বলে হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে লকডাউনে ছাড় দিয়ে বিভিন্ন দোকান খোলার ব্যাপারে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও শিলিগুড়িতে তা এখনই কার্যকর করার পক্ষে নয় পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, বিধানমার্কেট, হকার্স কর্নার মার্কেটগুলি এখনই খোলা হোক, চাইছেন না তাঁরা। এদিন ৬ এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের এলাকায় যান প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকাররা। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।