বালুরঘাট নাট্য উৎকর্ষকেন্দ্রে সহকর্মী ডলি দত্ত সরকারের সঙ্গে চপ ভাজছেন সন্ধ্যা হালদার (চাদর গায়ে)। নিজস্ব চিত্র।
‘‘তৃণমূল নেতা বলে কি গাড়ি-বাড়ি থাকতেই হবে!’’ ছুটে এল পাল্টা প্রশ্ন। বেসন ফেটানো হাত। সবে সাজাচ্ছেন চপ-অমলেটের দোকান। গ্রাহকের অপেক্ষায় দক্ষিণ দিনাজপুরের চকভৃগুর সন্ধ্যা হালদার। আপনি না তৃণমূলের প্রধান ছিলেন? জবাব এল, ‘‘প্রধান ছিলাম। এখনও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সভাপতি আছি। তা বলে কি নাট্যমেলায় চপ-কাটলেটের দোকান দিতে পারব না?’’
ইডির ‘কবলে’ এ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী। এক-এক জনের বাড়ি, ‘সাগরেদদের’ ঘর থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের অভিযোগ। হাওয়ালায় টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে। ঠিক এমনই সময়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের প্রাক্তন প্রধান নাট্যপার্বণের প্রাঙ্গনে চপ বিক্রি করছেন। সন্ধ্যা জানালেন, প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই তিনি ‘দুম’ করে রাজনীতিতে চলে আসেন ২০১৩ সালে। জিতে পরে প্রধান হন।
সন্ধ্যার স্বামী নিখিল মাছ বিক্রেতা। চোখে তাঁর জটিল রোগ। বেঙ্গালুরু ফেরত স্বামীর চোখ নিয়ে চিকিৎসকেরাও জবাব দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি। এখন কোনও রকমে কাজ করেন। তা বন্ধ হতে পারে যে কোনও দিন। বাড়িতে দুই ছেলে এখনও স্কুলপড়ুয়া।
সন্ধ্যা প্রধান হওয়ার পরেই হাড়ে হাড়ে টের পান, কত ধানে কত চাল। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে অনেক রকম আয়ের প্রস্তাব দেন। সব নাকচ করে দিয়েছিলাম। তাই আজ চপ বিক্রি করেও রাজনীতিটা করছি।’’ চকভৃগু পঞ্চায়েত ভেঙে তিনটি ওয়ার্ড হল বালুরঘাট পুরসভার। তাই সন্ধ্যা আর নতুন করে প্রার্থী হতে পারলেন না। জানালেন, পরিবারে আর্থিক অনটন আছে বলেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘ফুড স্টল’ চালাতে শুরু করেন গত ডিসেম্বর থেকে।
খারাপ লাগে না? সন্ধ্যার দাবি, ‘‘আলবৎ লাগে। যখন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ শুনি, মনে হয়, এঁদের জন্যই, দলের বদনাম হচ্ছে। আমি তো খেটেই দিব্যি চালিয়ে নিচ্ছি।’’ নাট্যমেলায় বিক্রিবাটা কেমন হল? তেলেভাজার কড়াইয়ে খুন্তি নাড়তে নাড়তেই সন্ধ্যা আর তাঁর সহকর্মী ডলি দত্ত সরকার হেসে মাথা নোয়ালেন। কনসার্টের বাজনা ইঙ্গিত দিল, নাট্যপার্বণের রঙ্গমঞ্চে পালা শেষ। সন্ধ্যার কড়াইয়ে তেল গরম। তেলেভাজার গন্ধ নাট্য উৎকর্ষকেন্দ্রের উঠোন জুড়ে।