জলস্তর বাড়ছে তিস্তা নদীতে। — নিজস্ব চিত্র।
সিকিমে অবিরাম বৃষ্টির জের এসে পড়া শুরু উত্তরবঙ্গেও। নদীতে জল বাড়ছে। ক্রমশ ফুলেফেঁপে উঠছে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান নদী তিস্তা। গজলডোবা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার জেরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা করছেন তরাই, ডুয়ার্সের বাসিন্দারা। উত্তরবঙ্গেও চলছে টানা বৃষ্টি, ফলে আগামিদিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রোদের তাপে যখন ভাজাপোড়া হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গ, তখন বন্যার ভ্রুকুটি নিয়ে রাতে ঘুমোতে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ। সাধারণত, বাংলায় সবচেয়ে আগে বর্ষা প্রবেশ করে উত্তরবঙ্গে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত বেশ কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি চলছে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার-সহ গোটা তরাই, ডুয়ার্সে। সিকিম থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত সমস্ত নদীই বাংলায় প্রবেশ করেছে। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে তিস্তা, তেমনই রয়েছে অজস্র ছোটবড় নদী। সিকিমে অবিশ্রাম বৃষ্টি শুরু হতে সেই নদীগুলির জলস্তর বাড়তে আরম্ভ করেছে। উত্তর সিকিমে চলছে অতি ভারী বৃষ্টি। সেই জল নদীখাত দিয়ে ঝড়ের বেগে নেমে আসছে সমতলে। ফলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ডুয়ার্সের নদীগুলিতে তেমন জল ছিল না। কিন্তু বেলা বাড়তেই জলস্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা বলে, এই সব পাহাড়ি ঝোরা বা নদীতে জলস্তর কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। যে হারে সিকিমে একটানা বৃষ্টি চলছে, তাতে প্রমাদ গুনছেন সমতলের মানুষ। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের সুখানি নদীর জল অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার মনমোহনধুরা যাওয়ার পথে একটি সেতুর উপর দিয়ে বইছে সুখানির জল। ওই সেতুর উপর দিয়ে মনমোহন ধুরার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে ওই সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় মনমোহন ধুরা গ্রামের সঙ্গে নাগরাকাটা বাজারের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জল না কমা পর্যন্ত যাতায়াত অসম্ভব।
অন্য দিকে, ফুঁসছে তিস্তাও। জলপাইগুড়ির গজলডোবা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে। ফলে তিস্তার নিম্ন অববাহিকায় জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় গজলডোবা ব্যারেজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর। পাহাড়ে অবিরাম বৃষ্টির জেরে তিস্তা ছাড়াও জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে জলঢাকা, সংকোশ, ডায়না, তোর্সার মতো অপেক্ষাকৃত বড় নদীর। এ ছাড়াও বিভিন্ন ছোট ছোট নদীও নব উদ্যমে ছুটে চলেছে।