নিজের জেলার প্রয়োজন মিটিয়ে যে জেলার কৃষকরা অন্য জেলার ক্ষুধা মেটায়—নোট বাতিলের গুঁতোয় আজ তাঁরাই ধানের ন্যূনতম দাম পাচ্ছেন না। রাজ্যের সীমানাবর্তী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঘটনা।
বাড়ি থেকে ধানের বস্তা নিয়ে বের হতেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাইকার ব্যবসায়ীরা কাঁটা নিয়ে ওঁত পেতে রয়েছেন। প্রশাসন সহায়ক দামে ধান কিনতে নামেনি। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে অভাবি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ছোট ধান চাষিরা। তপনের অর্জুনপুরের চাষি অনন্ত বর্মনের কথায়, আলুর জমি তৈরি। ধান বেচে নগদ টাকা না পেলে এ বারে চাষটাই তো হবে না? ছোট চাষি অনন্তবাবুর কথার প্রতিধ্বনি তপনের অর্জুনপুর থেকে বালুরঘাটের খাসপুর, চিঙ্গিশপুরের মতো সীমান্ত এলাকায় চাষিদের মুখে শোনা গিয়েছে।
জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জ্যোতির্ময় বিশ্বাস জানান, জেলায় ধান কাটা প্রায় শেষ। দেড় লক্ষ হেক্টরের বেশি জমিতে ধান চাষ করে চলতি বছর এই জেলায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি ধান উৎপন্ন হয়েছে। বছরে জেলাবাসীর খাবারের প্রয়োজনে লাগে ২ লক্ষ মেট্রিক টনের কিছু বেশি ধান। বাকি ধান অন্য জেলায় পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘বরাবরই দক্ষিণ দিনাজপুর ধান উৎপাদনে ওই সাফল্য ধরে রেখেছে।’’ ওই সাফল্যের কতটা দাম চাষিদের ঘরে পৌঁছচ্ছে তা দেখতে গিয়ে ছোট চাষিদের বিষণ্ণ ও শুকনো মুখের ভিড় সামনে এসে পড়েছে।
দিন দিন ধানের দাম নেমে যাওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন জেলার কৃষকরা। জেলার অধিকাংশ ব্লকে ধানের বদলে ধান দিয়ে চাষিরা জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। এখন ধান বেচে ঋণ শোধ থেকে সম্বৎসরের সংসারের খরচের হিসেব-নিকেশ সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এক দিন গত সোমবার বালুরঘাট এবং তপন ব্লকে নমুনা শিবির করে প্রতি কুইন্ট্যাল ১৪৭০ টাকা সরকারি সহায়ক দামে চাষিদের কাছ থেকে কিছু ধান কেনার পর ওই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে খোলাবাজারে রোজ ধানের দাম কমছে। গত সপ্তাহে হাটগুলিতে প্রতি কুইন্ট্যাল ধানের দাম কমে ১০০০ টাকা হয়েছিল। চলতি সপ্তাহে প্রায় ৯০০টাকায় নেমে গিয়েছে বলে চাষিরা অভিযোগ করেছেন।
বালুরঘাটের কাশীপুর এলাকার চাষি সুশেন ঘোষ, কার্তিক সরকার, বিনয় মণ্ডলদের কথায়, ধানের উপর তাঁদের বছরের যাবতীয় হিসেব-নিকেশ ধরা থাকে। বছরের খোরাকির ধান রেখে বাকিটা বেচে ছেলেমেয়ের টিউশন খরচ, ঋণশোধ থেকে রবিচাষের প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রশাসন থেকে সে ভাবে সহায়ক দামে ধান কিনতে নামেনি। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের টাকাও মিলছে না। ফড়েদের বেঁধে দেওয়া দামেই আমরা ধানের অভাবি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। সুশেন, কার্তিকবাবুরা আক্ষেপ করেন, ‘‘এর শেষ কোথায়? আমরা জানি না।’’