ঐতিহ্যবাহী মদনমোহন দেবের রাস উৎসব। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ আমলের সব নিয়মনিষ্ঠা মেনেই উদ্বোধন হল ঐতিহ্যবাহী মদনমোহনের ১৩৩তম রাস উৎসবের। সোমবার রাস উৎসবের উদ্বোধন করলেন কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান।
১৮৯০ সালে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির স্থাপনের পর থেকে এই রাস উৎসব হয়ে আসছে। এই রাস উৎসবের উদ্বোধন করে কোচবিহারের মহারাজা নিজেই পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন এবং কোচবিহারবাসীর মঙ্গল কামনা করতেন। বর্তমানে কোচবিহারের জেলাশাসক এই রাস উৎসবের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এই মন্দিরের দেখাশোনা করে দেবত্তোর ট্রাস্টবোর্ড। এই বোর্ডের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন জেলাশাসক পবন কাদিয়ান।
সোমবার সন্ধ্যায় কোচবিহারের বাসিন্দাদের মঙ্গল কামনায় পুজোয় বসেন জেলাশাসক পবন কাদিয়ান। পুজো সম্পন্ন করেন রাজপুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। রাত ৯ টা ১০ মিনিটে রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলাশাসক। এর পর সাধারণ ভক্তদের জন্য মন্দিরের গেট খুলে দেওয়া হয়। এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে মদনমোহন মন্দিরের পাশেই অবস্থিত রাসমেলা ময়দানে কোচবিহার পৌরসভার পক্ষ থেকে রাস মেলার আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই মেলার উদ্বোধন করা হবে। আগামী কুড়ি দিন চলবে এই মেলা। ইতিমধ্যেই রাসমেলা ময়দানে দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে নিজেদের পসার নিয়ে বসেছেন।
রাজপুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ বলেন, “সন্ধ্যারতির মধ্য দিয়ে এই রাস উৎসবের সূচনা হয়। এর পরই জেলাশাসক রাস উৎসবের বিশেষ পুজোয় বসেন এবং কোচবিহারবাসীর মঙ্গল কামনা করেন। এর পর তিনি রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস উৎসবের সূচনা করেন।” পুজো শেষে রাসচক্র ঘুরিয়ে জেলাশাসক বলেন, “মদনমোহনের কৃপায় আজ থেকে কোচবিহারের রাস উৎসব শুরু হল, কোচবিহারবাসী এবং সকলের পক্ষ থেকে মদনমোহন দেবেরর কাছে মঙ্গল ও সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করেছি। আমার পরম সৌভাগ্য যে আমি চতুর্থবার রাসচক্র ঘুরিয়ে এই মহান কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি।”
ঐতিহ্যবাহী এই রাস উৎসব কোচবিহারের মহারাজাদের ধর্মনিরপেক্ষতার এক অপরূপ নিদর্শন। রাজ আমল থেকে এই রাস উৎসবের রাসচক্র তৈরি করে আসছেন এক মুসলিম পরিবার। বংশপরম্পরায় আলতাফ মিয়ার পরিবারের সদস্যরাই এই রাস উৎসবের রাসচক্র তৈরি করেন। পূর্বে আলতাফ মিয়ার বাবা, ঠাকুরদারা এই রাস চক্র তৈরি করতেন। বর্তমানে আলতাফ মিয়া সেই ধারা বজায় রেখেছেন। লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে নিরামিষ ভোজন করে তিনি এই রাস চক্র তৈরির কাজ শুরু করেন। রাসপূর্ণিমার দিন তিনি মদনমোহন মন্দিরে এই রাসচক্র স্থাপন করেন। আর এই রাসচক্র ঘুরিয়েই শুরু হয় রাস উৎসব।