কার্শিয়াঙের গিদ্দাপাহাড়ে চা বাগান শ্রমিক সংগঠনদের নিয়ে জিটিএ-র বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ের চা বাগানে শ্রমিক পরিবারগুলি যে জমিতে রয়েছেন, সেটারই পাট্টা দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য সরকারকে জানানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হল। রবিবার বিকেলে কার্শিয়াঙের গিদ্দাপাহাড়ের সার্কিট হাউসে বাগানের জমি নিয়ে বৈঠক ডাকে জিটিএ। সেখানে জিটিএ প্রধান অনীত থাপা, জিটিএ এবং ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকেরা ছাড়াও শাসক ও বিরোধী বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বৈঠকে জিটিএ প্রধান সবাইকে রাজনীতি ভুলে চা শ্রমিকদের জন্য যা জরুরি তা নিয়েই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন। তার পরে টানা আলোচনায় ঠিক হয়, নতুন করে কোথাও জমিতে পাট্টা দিয়ে শ্রমিকদের বসানোয় আপত্তি থাকবে। সঙ্গে শ্রমিক কৃষি জমির পাট্টাও রয়েছে। সেই জায়গা থেকে শ্রমিকেরা যে কলোনি বা বস্তিতে ঘর করে আছেন, সেটিরই পাট্টা দেওয়া হোক। এই দাবিই প্রথম থেকে তোলা হয়েছিল। হামরো পার্টি, জিএনএলএফ, প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা, বামেদের সংগঠনের সদস্যরাও একই দাবির কথা বলেন। অনীত থাপাও এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। পরে অনীত বলেন, ‘‘চা শ্রমিকদের জমির অধিকার কারও ব্যক্তিগত অধিকার বা বিষয় নয়। এটা পাহাড়ের আমাদের সার্বিক জাতির বিষয়। সকলকে মিলে এ জন্য কাজ করার কথা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম। সর্বসম্মতিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত ধরেই সরকারকে এগনোর জন্য বলা হবে।’’
গত অগস্টে রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে চা শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রত্যেক জেলার জেলাশাসককে সমীক্ষার জন্য বলা হয়। নির্দেশিকায় জেলাশাসকদের বিস্তারিত সমীক্ষা করে এগনোর কথা ছিল। বাগানের খালি বা অব্যবহৃত জমি সমীক্ষা করে তা লিজ় ফেরত নিয়ে পাট্টা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। পরিবারের প্রধান মহিলা সদস্যের নামে এবং তা সম্ভব না হলে পুরুষ ও মহিলা যৌথ নামে পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৫ ডেসিমেল জমি পরিবারের মধ্যে হস্তান্তরযোগ্য হলেও বিক্রি বা অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না বলে ঠিক রয়েছে। বাগানে বাগানে সমীক্ষার কাজ শুরু হতেই সমস্যা দেখা দেয়। বিরোধীরা আশঙ্কা করেন, শ্রমিকদের নিজেদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে অন্যত্র বসানো হবে। সকলকে ৫ ডেসিমেল জমি দেওয়া হলে যাঁদের বেশি জমি রয়েছে, তাঁরাও সমস্যায় পড়বেন। বাগানে বাগানে বিজেপি, জিএনএলএফ, সিপিএমের মতো দল শ্রমিকদের জমি থেকে সরানোর আশঙ্কায় রাস্তায় নামে। বাগানে বাগানে আন্দোলন শুরু হতেই সরকার পাহাড়ে সমীক্ষার কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রায় তিনমাস টানাপড়েনের পর গত ২ নভেম্বর সরকার পাহাড়ে সমীক্ষার কাজ শুরুর নির্দেশিকা জারি করে। তা করতে গিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য রবিবার চা শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকে জিটিএ।
চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের নেতা তথা প্রাক্তন বাম সাংসদ সমন পাঠক বলেন, ‘‘চা শ্রমিকদের জমিতেই পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জিটিএ সবাইকে ডাকায় বিষয়টি ভাল হয়েছে। তবে আমাদের নজরদারি থাকছে।’’