West Bengal Panchayat Election 2023

বাড়ি জুড়ে বিষণ্ণতা, কান্না স্বজনহারার

শনিবার কোচবিহারের ফলিমারিতে ভোটবাড়ি বুথে দুষ্কৃতীরা বোমা, গুলি ছুঁড়ে খুন করে মাধব বিশ্বাসকে (৩৫)। ভোটকেন্দ্রের দরজার সামনেই লুটিয়ে পড়েন মাধব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বাড়ি জুড়ে বিষণ্ণতা। ছোট ছেলেটি বারে বারে কেঁদে উঠছে। ডাকছে ‘‘বাবা, বাবা’’ বলে। এ দিক ও দিক তাকিয়ে দেখছে। কোনও উত্তর না পেয়ে যেন পাগল হয়ে উঠছে সে। সাদা থান পরে গৃহবধূ বসে ঘরের কোণে। ২৪ ঘন্টা আগেও তিনি ভাবেননি, এমন দিন আসবে। মাঝেমাঝে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। প্রলাপ বকছেন, ‘‘কেন আমাকে ছেড়ে গেলে। এখন আমি ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে কী ভাবে বেঁচে থাকব।’’

Advertisement

শনিবার কোচবিহারের ফলিমারিতে ভোটবাড়ি বুথে দুষ্কৃতীরা বোমা, গুলি ছুঁড়ে খুন করে মাধব বিশ্বাসকে (৩৫)। ভোটকেন্দ্রের দরজার সামনেই লুটিয়ে পড়েন মাধব। আঘাত লাগে মাথায়। গলগলিয়ে রক্ত বেরিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তিনি এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সদস্য বলে পরিচিত ছিলেন। বছর আটেক ধরে সরাসরি বিজেপি করতে শুরু করেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে যান। এ বার আর ভোটে দাঁড়াননি। বিজেপি প্রার্থীর ‘পোলিং এজেন্ট’ হয়েছিলেন। আর সেটাই তাঁর কাল হল। দেওয়ানবস বাজারে ছোট্ট ওষুধের দোকান রয়েছে মাধবের। গ্রামীণ চিকিৎসক বলে পরিচিতি ছিল তাঁর। তা দিয়েই কোনও ভাবে সংসার চলত। সেই সংসার এখন কী করে চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাধবের স্ত্রী দীপালি ভৌমিক গৃহবধূ। তাঁর সাত বছরের ছেলে আদিত্য ক্লাস ওয়ানে পড়াশোনা করে। মাধবের ভাই রতন বলেন, ‘‘এ ভাবে আমার দাদাকে মেরে ফেলা হবে, ভাবতে পারিনি। দাদা তো কারও কোনও দিন ক্ষতি করেনি। আমরা বিচার চাই।’’

মাসখানেক আগেই বাড়িতে ফিরেছিলেন দিনহাটার ভিলেজ ওয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগ্নী এলাকার যুবক চিরঞ্জিৎ কারজি। তিনি পরিযায়ী শ্রমিক। ভোটের পরেই ফের ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হল না। ভোটের দিন সকাল দশটা নাগাদ মা দুলালীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন চিরঞ্জিৎ। তার পরেই দুষ্কৃতীদের এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। বিজেপি দাবি করে, চিরঞ্জিৎ তাদের সক্রিয় কর্মী। তৃণমূল প্রথমে দাবি করেছিল, চিরঞ্জিৎ তাদের কর্মী। পরে দাবি করা হয় তৃণমূলের সাধারণ ভোটার। চিরঞ্জিতের মা দুলালী বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’’

Advertisement

শুক্রবার গভীর রাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে বক্সিরহাট থানার রামপুর ১ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল চেয়ারম্যান গণেশ সরকারকে। শনিবার ভোট হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষ ওই ঘটনার পরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। রবিবারও গোটা এলাকা যেন চুপ। গণেশের বাড়ির ভিতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে বার বার। গণেশের স্ত্রী পপি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। বাড়িতে ফিরে মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারাচ্ছেন। গণেশের এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে সুজন পরিযায়ী শ্রমিক। কাজ করেন মুম্বইয়ে। সেখান থেকে ফিরছেন তিনি। মেয়ে মাম্পির বিয়ে হয়েছে। তিনি জানান, তাঁর বাবা পরিবারের থেকে তৃণমূলকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি খুনের জন্য দায়ী তৃণমূল। পুলিশ-প্রশাসনের অবস্থা সব থেকে খারাপ। দুষ্কৃতীদের আড়াল করে রাখা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের কোচবিহার জেলার মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘খুনের রাজনীতি করছে বিজেপি।’’

সহ-প্রতিবেদন: নমিতেশ ঘোষ, সুমন মণ্ডল, সঞ্জীব সরকার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement