ভোটের মুখে তাতছে পাহাড়, উত্তাপ ছড়াচ্ছে ফেসবুকেও

বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে শৈলশহর দার্জিলিঙের। পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য বনাম ষষ্ঠ তফসিলের দাবিকে সামনে রেখে আসরে নেমে পড়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফ।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৮
Share:

বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে শৈলশহর দার্জিলিঙের। পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য বনাম ষষ্ঠ তফসিলের দাবিকে সামনে রেখে আসরে নেমে পড়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফ।

Advertisement

দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের দাবিকে সামনে রেখে নেমে পড়েছেন প্রচারে। ক’দিন আগেই মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ পৃথক রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে পদযাত্রা শেষ করেছেন। তার মধ্যেই জিএনএলএফ সভাপতি মন ঘিসিঙ্গ পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে পাল্টা সভা, পদযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে আরও বাড়তি মাত্রা এনেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে দুই দলের লড়াইও।

গত তিনদিন ধরে ফেসবুকে দু’পক্ষের নেতারা শুধু নিজেদের দাবিকে তুলে ধরাই নয়, অপরের দাবি ঠিক নয় বলেও নানা পোস্ট করা শুরু করেছেন। এর সমর্থনে তাঁরা হাতিয়ার করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু নথি ও লোকসভা ভোটে বিজেপি’র ইস্তাহারকে। জিএনএলএফের হয়ে দলের আইনি পরামর্শদাতা নীরজ লিলাধর জিম্বা তামাঙ্গ এবং মোর্চার অন্যতম নেতা মণি গুরুঙ্গের ফেসবুক পোস্টগুলিকে ঘিরে দু’দলের কর্মী, সমর্থকরা ‘অনলাইন’ লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন। ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই লড়াই জোরদার হবে বলে পাহাড়ের অন্য রাজনৈতিক দলগুলি মনে করছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, মণি গুরুঙ্গ এক সময় প্রয়াত জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিঙ্গের ছায়াসঙ্গী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কিছুদিন আগেই গুরুঙ্গের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি মোর্চায় যোগ দেন। এখন তাঁকে মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গের অন্যতম সঙ্গী হিসাবে পাহাড়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে দেখছেন পাহাড়বাসী। নবীন নীরজও সুবাস ঘিসিঙ্গের অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন। নীরজের বক্তব্য, আলাদা রাজ্য তাঁদের স্বপ্ন। এরজন্য ধাপে ধাপে এগোতে হবে। মোর্চার মত ভুয়ো আশ্বাস দিয়ে নয়। তিনি বলেন,‘‘পাহাড়ে দরকার ষষ্ঠ তফসিলের স্বীকৃতি। এর মাধ্যমেই পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়ন হতে পারে। মোর্চার তরফে অপপ্রচার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার আলাদা রাজ্য দেবে বলে মোর্চা যা দাবি করছে, তা আসলে সঠিক নয়।’’ এর পাল্টা মোর্চার মণি গুরুঙ্গের বক্তব্য, ‘‘আমি সুবাস ঘিসিঙ্গের সঙ্গে বহু বছর কাটিয়েছি। আমি ষষ্ঠ তফসিল নিয়ে সবই জানি। মানুষকে ভুল বোঝালে তো চলবে না। যেটা বাস্তব, সেটাই মানতে হবে। এখন বিমল গুরুঙ্গের নেতৃত্বে আলাদা রাজ্য গঠনই আমাদের লক্ষ্য।’’

মোর্চা নেতা মণি গুরুঙ্গ ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে তথ্য জানার অধিকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে পাওয়া নথি ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করেছেন, চর্তুদশ লোকসভার সময়সীমা শেষ হতেই ষষ্ঠ তফশিল বিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এটা নিয়ে নতুন করে আর কিছু করার নেই। এর পাল্টা হিসাবে নীরজ বিজেপি’র ২০১৪ সালের লোকসভার ইস্তাহারের একটি অংশ ফেসবুকে পোস্ট করে দেন। সেখানে গোর্খাদের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার কথা বলা রয়েছে। তাতে কোথাও রাজ্যের আশ্বাস বা গোর্খাল্যান্ডের কথা বলাই হয়নি বলে নীরজ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বিষয়টি বিবেচনার মধ্যেই থেকে যাবে।’’

নেতাদের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ষষ্ঠ তফশিল বিল কি শেষ হয়ে গিয়েছে বা আলাদা রাজ্য নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার কি সত্যিই ভাবছে না-এমন বহু প্রশ্ন উঠেছে। নীরজের কথায়, ‘‘মহিলা সংরক্ষণ বিল তো চারবার সংসদে উঠেও পাশ হয়নি। তাতে কি তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইচ্ছা করলেই সরকার ষষ্ঠ তফশিল বিল আবার আনতে পারে।’’ আবার মণি গুরুঙ্গ বলেছেন, ‘‘বিজেপি ছোট ছোট রাজ্যের পক্ষে, তা সবার জানা। আমাদের দাবি তো বিবেচনাধীন। জিটিএ-র মাধ্যমেই ধীরে ধীরে আমরা এগোচ্ছি।’’

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে নভেম্বর মাসে লোকসভায় ষষ্ঠ তফশিল বিল পেশ করা হয়। পরে ২০০৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু লোকসভায় মেয়াদ শেষ হতেই বিলটি ‘ঠান্ডা ঘরে’ চলে যায়। উল্টে, সরকারি তরফে একাধিক ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও জিটিএ চুক্তি গোর্খাল্যান্ডের দাবির কথাটি উল্লেখ করা ছাড়া আলাদা রাজ্যের বিষয়টিও এগোয়নি। এর মধ্যে ২০১১ বিধানসভার ভোটের সময় পাহাড় ছাড়া ঘিসিঙ্গ প্রার্থী দিতেই মোর্চার সঙ্গে ভোটে তাঁদেরই লড়াই হয়। তিনটি বিধানসভায় জিএনএলএফ হারলেও দ্বিতীয় স্থানে তো ছিলই, এছাড়াও তিনটি কেন্দ্র মিলিয়ে ৫০ হাজারের মত ভোটও পায়। এবার তৃণমূল পাহাড়ে থাকায় সমীকরণ কতটা বদলাতে পারে সেই হিসেব কষছে সব দলই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement